ঢাকারবিবার , ১০ মার্চ ২০২৪

ছোট ছোট দুধেল গাভীর খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছে পাবনার শত শত পরিবার।


মার্চ ১০, ২০২৪ ১২:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ মানিক হোসেন, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা :
দুগ্ধ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পাবনার গ্রামাঞ্চলের শত শত পরিবার দুধেল গাভীর ছোট ছোট খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছে। গাভী পালন খুবই লাভজনক হওয়ায় বেকার যুবকরা গো-খামার স্থাপনে ঝুঁকে পড়ছে। ফলে এ অঞ্চলে গড়ে উঠছে নতুন নতুন গো-খামার, তরল দুধের উৎপাদন বাড়ছে। অনেকেই পেশা বদল করে গো-খামারে পুঁজি বিনিয়োগ করছেন।
স্বাধীনতার পর সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ীতে বড়াল নদী পাড়ে স্থাপন করা হয় সরকারী দুগ্ধ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকারী সমবায়ী প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার। এই দুগ্ধ অঞ্চলকে টার্গেট করে বেশ কিছু বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ করতে এ অঞ্চলে তাদের আঞ্চলিক ও শাখা দুগ্ধ সংগ্রহশালা স্থাপন করেছে। এরফলে তরল দুধের চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকে। সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে কেন্দ্র করে পাবনা অঞ্চলের শত শত পরিবার তাদের জীবিকার পথ হিসেবে গাভী পালন ও দুধের ব্যবসা বেছে নিয়েছেন। ফলে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে শত শত গো-খামার।
এদিকে চাহিদার তুলনায় দুধ উৎপাদন কম হওয়ায় ছানা উৎপাদক ও অসাধু ব্যবসায়ীরা গোপনে নকল দুধ তৈরি করে আসল দুধের সাথে মিশিয়ে বেসরকারী দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রি করছে জানা গেছে। গো-খামারে বাংলাদেশি হাইব্রিড, জার্সি, ফ্রিজিয়ান, এফএস, শাহিওয়াল, অস্ট্রেলিয়ান ও সিন্ধিসহ হরেক জাতের শঙ্কর গাভী পালন হচ্ছে।
পাবনা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলে প্রতিদিন সাড়ে চার লাখ লিটার দুধের চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হচ্ছে চার লাখ লিটার। এরমধ্যে এক লাখ ২০ হাজার লিটার থেকে দেড় লাখ লিটার বাঘাবাড়ী মিল্কভিটা, পৌনে দুই লাখ লিটার দুধ আফতাব, আকিজ, প্রাণ, আমোফ্রেস মিল্ক, ব্রাকসহ বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান, ঘোষরা ৫০ থেকে ৫৫ হাজার লিটার, দুই শতাধিক মিষ্টির দোকান ১৫ হাজার লিটার, হাট-বাজারে স্থানীয় ক্রেতারা প্রায় ১০ হাজার লিটার দুধ ক্রয় করে থাকে। এ হিসেবে প্রতিদিন দুধের ঘাটতি পড়ে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার লিটার। দিন দিন তরল দুধের চাহিদা বাড়ছে। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই সম্ভাবনাময় এ খাতে নতুন নতুন উদোক্তা বিনিযোগ করছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাভী পালন করে ভালো লাভ পাওয়ায় পাবনা জেলার ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী, সানিলা, করমজা, টলট, বড়পায়না, সোনাতলা, বৈরাগীসোনাতলা, ভিটাপাড়া, শরিষা, সেলন্দা, পাথালিয়াহাট, ডেমরা, হাটুরিয়া, নাকালিয়া, জগন্নাথপুর, ছোটপায়না, চাকলা, সোনাপদ্মা, বড়গ্রাম, পুন্ডৃরিয়া, পাটগাড়ী, বাউষগাড়ী, নাকডেমরা, হাদল, বনোয়ারিনগর, বেড়হাউলিয়া, খাঁনমাহমুদপুর, মনমথপুর, বিলসলঙ্গী, আফতাবনগর, গাগড়াখালী, মাসুমদিয়া, রুপপুর, বোয়লমারি, বরাট, নারিয়াগদাই, হলুদগরসহ বিভিন্ন গ্রামের শত শত পরিবার বানিজ্যিকভাবে দুগ্ধজাত গাভী পালন করছেন।
তারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করছেন সরকারী দুগ্ধ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকারী সমবায়ী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটাসহ, প্রাণ ডেইরি, আকিজ ডেইরি, আফতাব ডেইরি, ব্রাক ফুড (আড়ং), আমো ফ্রেস মিল্ক, কোয়ালিটি, বিক্রমপুরসহ বেশ কিছু বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানে। এক কথায় বলা যায়, সরকারি বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানে দুধের যে চাহিদা রয়েছে তার বড় একটি অংশ সাধারন কৃষকেরা পুরন করে থাকেন বলে সরকারি বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।
দুধ ব্যবসায়ী শাহাদৎ হোসেন জানান, মাসখানেক আগে তিনি গড়ে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার লিটার দুধ খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করতেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো দুধের চাহিদা বেড়েছে। সংগ্রহের পরিমান বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে তাকে বেশি দুধ সংগ্রহ করতে খামারী ও কৃষকদের চাহিদা অনুয়ায়ী দাদন দিয়ে দুধ সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
পাবনা জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রাণীসম্পদ মন্ত্রনালয় দেশের জিডিপিতে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ অবদান রাখছে। অথচ জাতীয় বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ পাওয়া যায় মাত্র শুন্য দশমিক তিন মতাংশ। সে ক্ষেত্রে একটি বিরাট ঘাটতি থেকে যায়। দেশে প্রতি বছর ৪১ হাজার টন গুঁড়ো দুধ আমদানি করা হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। অথচ দেশে তরল দুধের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দুধের চাহিদা পুরণ করে গুঁড়ো দুধ আমদানি নিরুৎসাহিত করা যায়।
কৃষিবিদ ড. আহেদ জামিল উদ্দিন বলেছেন, পাবনা জেলার গ্রামগুলোতে গাভী পালন এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের পশু চিকিৎসকেরা তাদের সব ধরনের সহযোগীতা দিচ্ছেন। এছাড়া গাভী পালন খুবই লাভজনক। গো-খামারে বিনিয়োগ এখন লাভজনক হয়েছে। গাভী পালন করে যেকেউ সহজেই বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারেন। গরিবি অবস্থা থেকে সহজেই হয়ে যেতে পারেন সচ্ছল।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ অথবা সম্ভব হলে অল্প প্রশিক্ষন নিয়ে শিক্ষিত বেকার যুবকরা গাভী পালন করতে পারেন। এতে তাদের বেকারত্ব ঘুচবে। তাছাড়া এসব কাজে বিভিন্ন বানিজ্যিক ব্যাংক সহজ শর্তে ঋন দিয়ে থাকে। তাই সামান্য পুঁজি নিয়ে যে কেউ গাভী পালন করতে পারেন। এতে মিটবে পুষ্টি চাহিদা, ঘুচবে বেকারত্ব, বন্ধ হবে দুধ আমদানিতে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়।
মোঃ মানিক হোসেন
বেড়া সংবাদদাতা
১০ মার্চ/২০২৪ইং
মোবাইল ঃ ০১৭৬০-৩৩৩২১৪
(ছবিসহ)

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ  বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।