মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বরাবর পাঠানো কয়েকটি চিঠির অনুলিপি এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।তথ্য-অনুসন্ধান বলছে, জেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইন্সুরেন্স কোম্পানি, ডায়াগনোস্টিক সেন্টারসহ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে একই ধরনের চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। চিঠি পাওয়ার পর অনেকেই স্বেচ্ছায় সাধ্যমতো অর্থ প্রদান করলেও অনেকে করেছেন বিরুপ মন্তব্য।এদিকে, জানতে চাইলে ‘আর্থিক সহযোগিতা’ প্রদান সংক্রান্ত চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।জানা যায়, গেল ১৮ মার্চ মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (নেজারত শাখা, ব্যবসা বাণিজ্য শাখা ও ট্রেজারি শাখা) ওমর শরীফ ফাহাদ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, লাইফ ইন্সুরেন্স, ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়। চিঠি পাওয়া ও অর্থ দানের বিষয়টি এই প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেন একাধিক ব্যক্তি। এর মধ্যে জেলা সদরে কর্মরত একাধিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির জেলা প্রতিনিধি ও ডিজিএমও রয়েছেন।একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেলা প্রশাসনের একজন এনডিসি আমাকে ফোন দিয়ে তার অফিসে যেতে বলেন। সেখানে গেলে তিনি বলেন, এবার আমাদের খরচ একটু বেশি। আপনি এই চিঠিটা (অর্থ সহযোগিতা প্রদান সংক্রান্ত) ইন্সুরেন্স কোম্পানির যারা রয়েছেন তাদের পৌঁছে দিয়েন। ওই কর্মকর্তার কথামতো তিনি সেই চিঠি ফারইষ্ট, সন্ধানী, মেঘনা, ডেল্টা লাইফ ও পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে পৌছে দেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি এনজিওর কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ দিবস ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে কয়েকদিন পরপরই জেলা প্রশাসনের লোকজন টাকা দাবি করেন। আগে তারা মুখে বলতেন। এখন চিঠি দিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যেই তারা এটি করছেন।শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক বলেন, বছরে দুই-তিন বার এরকম চাঁদা দিতে হয় জেলা প্রশাসনকে। এটা সকলেই জানে। এসব নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে সকলের মাঝে।আর্থিক সহযোগিতা প্রদান সংক্রান্ত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসন, মুন্সিগঞ্জ ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। এ আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে সকলের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, আপনার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে অন্যান্য বছরের ন্যায় সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।’জানা যায়, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছরের মত এবারও মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দিনব্যাপী কুচকাওয়াজ, জেলা ও উপজেলা সদরের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, চিত্রাঙ্কন- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন করেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন। স্বাভাবিকভাবেই এ আয়োজন সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থে আয়োজনের কথা থাকলেও চিঠি দিয়ে অর্থ সহযোগিতার বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন অনেকে।’আর্থিক সহযোগিতা’ প্রদান সংক্রান্ত চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (নেজারত শাখা, ব্যবসা বাণিজ্য শাখা ও ট্রেজারি শাখা) ওমর শরীফ ফাহাদ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। এটা প্রতিবছরই দেয়া হয়। তবে কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের যে আয়োজন- আমরা তাদেরকে (বীর মুক্তিযোদ্ধাদের) ইফতার দিবো- চাদরের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের বরাদ্দ তো খুবই কম থাকে। আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে আমরা যে চিঠি দিয়েছি- যারা চায় দিবে, না দিলে না দিবে। আমাদের কোন ধরনের বাধ্যবাধকতা নাই। আমাদের প্রোগ্রাম আমরা কিভাবে কালারফুল করতে পারবো- রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম। প্রোগ্রামটা আমাদের জেলা প্রশাসন আয়োজন করে কিন্তু এটি আমাদের একার না। সবাই মিলেই করি প্রোগ্রাম।’কিভাবে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যার ইচ্ছা বেশিরভাগই মনে করেন যে আসে, কেউ লোক পাঠিয়ে দেয়। যে যেরকম দিতে পারে নগদ আমাদের কাছে পৌছে দেয়।’স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে কি না জানতে চাইলে ‘ আমি এ বিষয়ে এসাইন অফিসার না’ ও চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই’ বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাকির হোসেন।এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপনের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন সংক্রান্ত একটি কমিটির দায়িত্বে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আশরাফুল আলম বলেন, ‘লুকোছাপা যেটা সেটা হচ্ছে কাগজছাড়া। চেয়ে চেয়ে নেয়ার বিষয় আছে। এটা হচ্ছে- কেউ চেক দেয়- কেউ আবার একটা জিনিস কিনে দেয়। সবাই যে নগদ দেয় বিষয়টা এরকম না। সরকার যে বরাদ্দ দেয় সরকার নিজেও জানে এতে হয় না। কিন্তু ফোন দিয়ে দিয়ে বলা- ভাই আপনি সহযোগিতা করেন। অ্যাজ এ অফিসার এটা হয় না। হ্যা ভাই চিঠি দিলাম- দিলে ভালো না দিলেও ওয়েল।’এসময় তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনি কি বিষয়টা প্রথম জানলেন?’গ্রহণকৃত এসব অর্থ সরকারি নিয়মে (লোকাল রিলেশন্স- এলআর ফান্ড) নেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা হচ্ছে- কেউ চেক দেয়- কেউ আবার একটা জিনিস কিনে দেয়। সবাই যে নগদ দেয় বিষয়টা এরকম না। ব্যাংকে গিয়ে সবাই হয়তো টাকা জমা দেয় না তবে এটার একটা হিসাব হবে- কত টাকা উঠলো কত ব্যায় হলো।’স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের মত এ ধরনের অনুষ্ঠানে সরকারি বরাদ্দ কত থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে ৫০ হাজার টাকা ছিলো। এখন সেটা বেড়ে ১ লাখ টাকা হতে পারে।’