মোঃ মানিক হোসেন, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা ঃপাবনা জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৬টি নদীর মধ্যে ১২টি মৎস্য খামার ও ফসলী জমিতে পরিনত হয়েছে। চারটি নদীতে দেখা দিয়েছে মারাত্মক নাব্যতা সঙ্কট। ফলে জেলার ৬২৮ কিলোমিটার নৌপথের মধ্যে কোন রকমে টিকে আছে মাত্র ১০৮ কিলোমিটার নৌপথ। ক্রমাগত পলি জমে ৫২০ কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। পণ্যসামগ্রীর আমদানি-রফতানি সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।
জানা যায়, ১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাবনা জেলার বিভিন্ন নৌরুটে লঞ্চ ও নৌকা চলাচল করত। এখন জেলার নদীপথ বছরব্যাপী সচল থাকে না। নাব্যতা ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্পর্কে সুচিন্তিত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকারি পর্যায়ে জেলার নদীগুলো সম্পর্কে একটা অদ্ভূত উদাসীন মনোভাব পোষণের কারণে আজ বিপর্যস্ত নৌপথ। প্রায় ১২ বছর হয়ে গেল কাজীরহাট ঘাটে ফেরি ভিড়ে না। পল্টুন পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বেড়ায় নৌবন্দর পরিকল্পনা আংশিক বাস্তবায়নের পর পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে।
বর্ষাকালে পাবনার ধান, চাল, পাট, মাছ, গুড়, গবাদীপশুসহ বিভিন্ন পণ্য এখনো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বেড়া ডাকবাংলা ঘাট থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রফতানি করা হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ নদী পথের নাব্যতা রক্ষা ও উন্নয়নে কাজীরহাট ঘাট, বাঘাবাড়ীর ভাটিতে হুড়াসাগর ও যমুনা নদী ছাড়া আর কোথাও ড্রেজিং করা হয় না। বর্ষাকাল ছাড়া অন্যান্য ঋতুতে নৌপথ কমে যাওয়ায় গুরুত্ব কমে গেছে নৌযানের। নৌকার প্রায় ২১ হাজার মাঝিমাল্লা ও জেলে বেকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে।
নদী পথে যাতায়াত আগের মতোই এখনো সুলভ। প্রতি লিটার জ্বালানীতে নৌপথে ২১৭ টন মালামাল পরিবাহিত হয় এক কিলোমিটার পথ। অথচ সড়ক পথে ডিজেল চালিত ট্রাকে এক লিটার জ্বালানীতে এক টন মালামাল এক কিলোমিটার বহন করা যায়। নিয়মিত নদী ড্রেজিং না করায় নৌপথ কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। জেলায় সারা বছর কতটুকু নৌপথ চালু থাকে তারও জরিপ করা হয় না। ১২ মাস পানি থাকে এমন নদী পদ্মা ও যমুনাতে বিশাল বিশাল চর জেগে ওঠায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে মালবাহী জাহাজ।
পাবনা জেলার পূর্ব প্রান্তে যমুনা নদী ৮০ মাইল সীমান্ত রচনা করে মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলাকে আলাদা করেছে। পৌষ মাসেই যমুনায় বিশাল বিশাল চর ও বালিয়াড়ি জেগে উঠেছে। এ নদীতে বার মাস নৌযান চলাচল করতে পারে। কিন্তু শুস্ক মওসুমে বিঘœ ঘটে। নদীতে নাব্যতা থাকে না বলে স্থানে স্থানে ড্রেজিং করে নৌপথ চালু রাখা হয়। বছরের সব সময় এ নদী দিয়ে বড় মালবাহী জাহাজ, লঞ্চ ও নৌকা চলাচল করে। যমুনা নদী দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। ইছামতির ৫০ কিলোমিটার পথ পরিত্যাক্ত হয়ে আছে। আগে বেড়া থেকে ভাঙ্গুড়ার বড়াল ব্রিজ পর্যন্ত লঞ্চ সার্ভিস চালু ছিল। সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। টিকে আছে কেবল কাজীরহাট পাটুরিয়া। জেলার বড়াল, গুমানী ও চন্দ্রাবতীতে বর্ষাকালে মালবাহী নৌকা চলাচল করে। কিন্তু অন্যান্য সময়ে নদীতে পানি থাকে না। ভরাট হয়ে গেছে আত্রাই নদী।
পদ্মা নদী অববাহিকার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পদ্মা ছিল স্থানীয় যোগাযোগ ও বাণিজ্যের চালিকাশক্তি। এই অঞ্চলের শতকরা নব্বইভাগ অধিবাসীই ছিল পদ্মা নদীর উপর নির্ভরশীল। ভারত উজানে ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মাণ করায় ভাটিতে পদ্মা নদী সংঙ্কুচিত হতে থাকে, পানি প্রবাহ হৃস পায়। এর ফলে পরিবর্তিত হতে থাকে পরিবেশ ও পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা। পদ্মা অববাহিকার অর্থনীতি মূলত কৃষি, মৎস্য ও গবাদীপশুসম্পদ নির্ভর। নৌপথে পদ্মা পাড়ের ফসল যেত চাঁদপুর, চট্রগ্রাম, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
পাবনা জেলার দক্ষিণ পশ্চিম সীমানায় পদ্মা নদীর ৫৫ কিলোমিটার, পূর্ব দিকে যমুনা নদীর ২০ কিলোমিটার, উত্তর দিরে হুড়াসাগর নদের আট কিলোমিটার এবং বড়াল নদীর ২৫ কিলোমিটার নদীপথ কোনো মতে টিকে আছে। সামান্য নৌপথ রয়েছে গুমানী নদীতে। সুতিখালির পাঁচ কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। রতœাই, আত্রাই, চিকনাই, চন্দ্রাবতী, কাকেশ্বরী, বাদাই ও ইছামতি নদীতে বর্ষাকালে মাছ চাষ হয়। শুস্ক মওসুমে বিভিন্ন রকম ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। ইছামতি নদীতে ৫০ কিলোমিটার নৌপথ ছিল। চিকনাই ৩৮ কিলোমিটার ও আত্রাই ৩০ কিলোমিটার। এখন এসব নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে।
বাঘাবাড়ীর কাছে বড়াল ও করতোয়ার মিলিত প্রবাহ হুড়াসাগর নদ নামে পূর্ব দিকে এগিয়ে গেছে। বড়াল নদী পথে মিল্কভিটার সদস্যরা দুধ সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু নৌপথ অচল হয়ে পড়ায় তরল দুধ সরবরাহে তাদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গোহালা নদীকে মধ্যবর্তী একটি চর বিভক্ত করে রেখেছে। কিন্তু বর্ষাকালে এই চর তলিয়ে গেলে নদী তখন বিভক্ত থাকে না। একত্র হয়ে যায়। তখন নৌযান যাতায়াত বাড়ে।
মোঃ মানিক হোসেন
বেড়া সংবাদদাতা
১২ মার্চ/২০২৪ইং
মোবাইল ঃ ০১৭৬০-৩৩৩২১৪
(ছবিসহ)
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭