মুন্সীগন্জ প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জে নির্জণ বাগান হতে তালের শ্বাস নেওয়ার কথা বলে অটো চালককে নির্জণ বাগানে নিয়ে গলাকেটে হত্যার পর আটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামা ভাইগ্না ২ জনকে ফাঁসি ও ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। সেই সাথে অটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় একই আসামীদের আলাদা ধারায় যাবজীব্বন কারাদন্ড ও আরো ২০ হাজার টাকা করে জড়িমানার আদেশ দেন।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১ টার দিকে মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা ২য় জজ আদালতের বিচারক বেগম খালেদা ইয়াসমিন উর্মি এ রায় দেন।
জানাগেছে, ২০২০ সালের ২৪ শে মে সকালে নিজ অটো নিয়ে ভাড়ায় চালাতে বের হয় নিহত ভিকটিম মোঃ সাহাবুদ্দিন শেখ (২২)। সে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার চাষিরী গ্রামের আবুল সেখের ছেলে।
নিহত সাহাবুদ্দিন ২০২০ সালের ২৪ মে সকাল ৮টার দিকে তার অটো বাইকটি নিয়ে বাড়ি হতে ভাড়ায় চালানোর জন্য বের হলে নিহতের বাড়ির পাশের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নেত্রাবর্তী গ্রামের মৃত সায়েদ সেখের ছেলে ইলিয়াস শেখ (৩২) ও তার ভাইগ্না পাশের লৌহজং উপজেলর ছত্রিশ গ্রামের মীর হোসেন মুন্সীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২৩) সকাল ৯ টার দিকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সানেবান্দা এলাকা হতে ভিকটিম শাহাবুদ্দিনকে ভাড়া করে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কুরমিরা হতে বালিগাঁও বাজারের তালের শাঁস নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কুরমিড়া গ্রামে নিয়ে যায়। পরে নির্জন বাগানে নিয়ে আসামী ইলিয়াস প্রথমে গলায় গামছা প্যাঁচাইয়া গলায় চাপ দিয়ে ধরে এবং রাকিব নিহতের হাত পা ধরে রাখে। পরে তাকে ওই নির্জন বাগানের পাশের মৃত ভেবে নিচু জমিতে ফেলে দিলে এই আসামীরা দেখে সাহাবুদ্দিন নাড়াচারা করিতেছে। পরে ইলিয়াস নিহতের গলায় দুটি দা দিয়ে কোপ দিয়ে তার শ্বাসনালী কেটে হত্যা নিশ্চিত করে তার ইজি বাইক ও তার পকেটে থাকা মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে ইলিয়াস মোবাইলটি নিয়ে তার পরিচিত সালাম নামের এক ব্যাক্তির নিকট বিক্রি করে দেয়। পরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সালামকে পুলিশ গ্রেফতার করলে সে এই মোবাইলটি ১নং আসামী ইলিয়াসের নিটক হতে ক্রয় করেছে বলে জানালে পুলিশ ইলিয়াসকে গ্রেফতার করলে মামলার মুল রহস্য উদঘাটন হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা আবুল সেখ বাদী হয়ে টঙ্গিবাড়ী থানায় অজ্ঞাত নামা আসামী করে একটি অভিযোগ দায়ের করে। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করার জন্য মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হলে গোয়েন্দা পুলিশ নিহতের মোবাইলের সুত্র ধরে সালাম নামের ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করলে সালাম জানায় সে আসামী ইলিয়াসের নিকট হতে মোবাইল ক্রয় করেছে। সেই মোবাইলের সুত্র ধরে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়।
নিহতের অটো কেনা বেচায় জড়িত থাকায় নিহতের বাবা আবুল সেখের মামলায় আরো ২ জনকে আসামী করে পুলিশ। তারা হলো মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রামের হাজী ইব্রাহিম মাদবরের ছেলে রাকিব মাদবর @ রাকিব ( ৩২) ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার চাপ গ্রামের মৃত মতিন সেখের ছেলে ও কবির হোসেন। এই আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদের বেকুসুর খালাস প্রদান করে আদালত।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী নিহতের বাবা আবুল সেখ বলেন, আমি রিক্রা চালিয়ে সংসার চালাই। আমার ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে সাহাবুদ্দিন তৃতীয় ছেলে ছিলো। এই ছেলেটাই আমাকে আয় রোজগার করে দিতো । আমার সেই ছেলেটারে ওরা মেরে ফেললো। আদালত যে রায় দিয়েছে আমি তাতে খুসি। রায় দ্রুত দেখে যেতে চাই।
নিহতের মা শাহানাজ বেগম বলেন, আমার ছেলেটাকে ওরা মেরে ফেললো। কি দোষ করেছিল আমার ছেলেটা । আমার ছেলেটাকে ওরা খুব কষ্ট দিয়ে মারছে। আমি ওদের ফাসি দ্রুত দেখে যেতে চাই।
এ ব্যাপরে নিহতের বোন খাদিজা বলেন, আমার ভাইটাকে ওরা খুব কষ্ট দিয়ে মারছে। এ রায়ে আমরা খুশি হয়েছি। আমরা দ্রুত ওদের ফাসিঁ চাই।
নিহতের ভাবি ফাহিমা বলেন, আমাদের পুরো পরিবারটিকে দেখে শুনে রাখা সাহবুদ্দিন । সে আমাদের ব্যাক্তিগত ভাবে খোজঁ খবর রাখতো আমাদের কোন অভাব অনাটনে পরতে দিতো না।
এ ব্যাপারে রাস্ট পক্ষের এপিপি সিরাজুল ইসলাম পল্টু বলেন, এই মামলায় মোট ১৮ জন স্বাক্ষ্য স্বাক্ষি প্রদান করেছেন। স্বাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় আদালত ২ জনের ফাসির আদেশ দিয়েছে রায়ে আমরা রাষ্টপক্ষ সতুষ্টি প্রকাশ করছি।