আপন সরদার মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বুধবার দিনভর কয়েকদফ গুড়িগুড়ি বৃষ্টির পর আজ বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোড় রাত থেকে মুন্সীগঞ্জে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম উৎকন্ঠায় পরেছেন আলু চাষিরা। আলু জমিতে পানি জমার আশঙ্কায় জমির আইল কেটে দিতে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন তারা।
এদিকে আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানাগেছে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বৃষ্টি পাত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামীকাল শুক্রবার সকাল হতে বৃস্টিপাত কমার সম্ভবনা থাকলেও আগামীকাল শুক্রবারও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকতে পরে।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলায় এ বছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বছর এ পর্যন্ত ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করে ফেলেছে কৃষক। বাকি জমি আবাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানাগেছে, আলু রোপণের আদর্শ সময় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত। সেই আদর্শ সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তাই কৃষক এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক জমিতে ইতিমধ্যে আলু রোপন করে ফেলেছেন। ঘুর্ণিঝর মিগজাউমের সংবাদ শুনে অনেকে জমি তৈরী করার পরেও অপেক্ষায় ছিলেন বৃষ্টিপাত হয় কিনা সেই অপেক্ষায় আলু রোপন করেননি। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোর রাত হতে মুন্সীগঞ্জ ঠিকই অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে হয়ে গেলো ঘুর্নিঝর মিথিলি। সে সময় কৃষকের অনেক জমিতে পানি জমে আলু বীজ নষ্ট হয়। পরে আবার কৃষক যখন তাদের জমিগুলো পূনরায় চাষাবাদ করে আলু আবাদ করেছেন এবং করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সে সময় এই বৃষ্টি যেন কৃষকের মরার উপরে খাড়ার ঘাঁ। মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গিবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলার কৃষি জমি ঘুরে দেখা গেছে , বুধবার হতে বন্ধ রয়েছে কৃষকের আলু আবাদের কাজ। যে কৃষি বিল গুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছিল সেই বিলগুলো এখোন শ্রমিক শূণ্য। কৃষক নিজেই কোদাঁল নিয়ে জমিতে জমিতে ঘুরছেন আইল কেটে পানি নামানোর নালা করার জন্য।
বুধবার সন্ধার দিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহি এলাকার বিলে আলু জমির আইল কেটে নালা তৈরী করছিলেন শাহাদাত হোসেন । তিনি বলেন, এ বছর ৭০ শতাংশ জমি আলু রোপন করার জন্য প্রস্তুত করছি। এ পর্যন্ত ২১ শতাংশ জমিতে আলু রোপন করছি। বাকি জমিগুলোও প্রস্তুত করে রাখছি। এতোদিনে আলু রোপন করে ফেলতাম। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ শুনতেছিলাম আবারো ঘুর্ণিঝর হইবো তাই আলু রোপন করিনাই। ঘুুণিঝড় না হলেও যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে মনে হয় এ বছর আর বাকি জমিতে আলু রোপন করতে পারমুনা। যেটুকু লাগাইছি সেই জমিতে যাতে পানি না জমে তাই নালা কেটে দিচ্ছি। তিনি আরো বলেন, এ বছর সার, আলু বীজ, জমি জমা সবকিছুর দাম বেশি। যে জমিগুলোতে আলু রোপন করিনাই সেগুলোতেও সার ছিটিয়ে রাখছি। এখোন আলু লাগাইতে না পারলে আমার সব লঞ্চ হইবো।
সিরাজদিখান উপজেলার তেলির বিল গ্রামের কৃষক রহমান সেখ বলেন, ‘আমি এবার ৫ কানি ( ৭০০ শতাংশ) জমিতে আলু রোপণ করেছি। এখন যেভাবে বেশি বৃষ্টি শুরু হয়েছে আমার রোপণ করা বীজ আলু একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে। পুনরায় আলু রোপণ করতে হবে। এতে আমার লাখ লাখ টাকা লোকসান হবে।
গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক মো. জসিম উদ্দিন প্রধান বলেন, এ বছর মিথিলির আগে আড়াইকানী জমিতে আলু রোপণ করেছিলাম। কিন্তু মিথিলির সময় বৃষ্টির পানি জমে সব নস্ট হয়ে গেছে। এখোন আবার নতুন করে লাগাইছি আবারো যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে মনে হয় সব পচেঁ আবারো নষ্ট হবে।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালাক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, গতকাল বুধবার পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ জেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়ে গেছে। এ বছর মুন্সীগঞ্জ জেলার মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু । বাকি জমিগুলোতে আলু আবাদের প্রস্তুতি চলছে।
তিনি বলেন, আলু চাষের উত্তম সময় নভেম্বর মাস। তবে এ বছর কিছুদিন আগে ঘুর্ণিঝড় মিথিলি আঘাত হানায় আলু আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। এখোন আবার বৃষ্টিপাত হচ্ছে এতে আলু চাষ আরো বিলম্বিত হবে।