ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া বাজারের পাশে অবস্থিত অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন – সালেহা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক রনি আক্তার এর বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকুরী করার অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০২২ সালে এই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়েছে। নাসির উদ্দিন নাম করে এক ব্যক্তি ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিল। ২০১৩ সালের পর আকরাম হোসেন নাম করে অন্য এক ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তারপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই আকরাম হোসেন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিল। নাসির উদ্দিন এবং আকরাম প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন এই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক ছিলেন রনি আক্তার। রনি আক্তার ছিলেন একজন সহকারী শিক্ষক। তার নেই শিক্ষক নিবন্ধন ও বি এড এর সনদ।
এই প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন আমি ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলাম। তারপর আমি ছেড়ে দিলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে আকরাম হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়। আমার জানামতে আকরাম হোসেন ২০১৯ সালের দিকে ওই বিদ্যালয় থেকে চলে এসেছে। ব্যান্ডবেজ তথ্য মতে রনি আক্তার দশ সাল থেকে ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক বলে জানা যায়।
এই বিদ্যালয়ের আরেক সাবেক প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায় যে তাকে কৌশল করে ওই বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তবে বিদ্যালয়ে নিয়োগ এর আগে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য তার কাছ থেকে নেয়া অর্থ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফেরত দিয়েছে। তবে তার সময় রনি আক্তার কম্পিউটার শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত ছিল।
বর্তমানে রনি আক্তার নিজেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দাবী করে বিদ্যালয়ের অনার বোর্ডে তার নাম ২০১৩ সাল থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে লেখা হয়েছে। বিশেষ সূত্রে জানা যায় যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামানের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হিসাবে বেতনভাতার জন্য রনি আক্তারের ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আগে এক দফা তার ফাইল পাঠানো হলে সেই ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ফেরত পাঠায়।
জানাযায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের কেউ একজন পরামর্শ দিয়েছে যে তার নিয়োগ দেখাতে হবে পিছনের সাল থেকে। তাই সেই মোতাবেক জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে রনি আক্তারের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেখিয়ে তার ফাইল শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এমনকি সেই সময় যে শিক্ষা অফিসার ছিল তার নাম ছিল মালা রানী তার স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ দেখানো হয়েছে বলে জানা যায়।
রনি আক্তারের জায়গায় কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হয়েছে এসডি হাসান সিদ্দিকি নামের একজনকে। যেখানে রনি আক্তার কম্পিউটার শিক্ষক ছিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেখানে কিভাবে আবার হাসান সিদ্দিকীকে ২০১৩ সাল থেকে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হলো। একই পদে ২জন কম্পিউটার শিক্ষক কিভাবে হল এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে এই রনি আক্তার হাসান সিদ্দিকীর নিকট থেকে তার নিয়োগ দেয়ার কথা বলে ১৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয় একটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হতে গেলে তাদের একাউন্টে কমপক্ষে ৩০ লক্ষ টাকা থাকতে হয়। এই ৩০ লক্ষ টাকা বিভিন্ন কায়দায় এই রনি আখতার উঠিয়ে নিজ পকেটস্থ করেছে। বিদ্যালয়ের হিসাব একাউন্ট তলব করলে সে তথ্য বেরিয়ে আসবে।
রনি আক্তার এই বিদ্যালয়ে ২০১৩ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে অনার বোর্ডে নাম থাকলে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে আপনি কত সাল থেকে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আছেন। তখন সে বলে যে আমি ১৩ সাল থেকে নিয়োগের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। আপনার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কোন পত্রিকায় দেয়া হয়েছিল জিজ্ঞাসা করলে বলেন যে দৈনিক নবচিত্র ও দৈনিক আজকের কাগজের কথা। যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে দৈনিক আজকের কাগজ তো অনেকদিন আগে বন্ধ হয়ে গেছে আপনি কিভাবে ওই পত্রিকায় ২০১৩ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেলেন। তখন তিনি তার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে আপনি কি বিএড পাস করেছেন? তখন সে বলে যে হ্যাঁ আমি বিএড পাশ করেছি ২০২০ সালে। ২০২০ সালে আপনি বিএড পাস করে ২০১৩ সাল থেকে কিভাবে প্রধান শিক্ষক হলেন এ প্রশ্নের উত্তর রনি আক্তারের কাছ থেকে আর পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে কম্পিউটার শিক্ষক হাসান সিদ্দিকীর কোন শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নেই। শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া এই বিদ্যালয়ের রবিউল ইসলাম নাম করে আর একজনের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ হওয়া বলে জানা গেছে। তার ব্যাপারে রনি আক্তারের কাছে জানতে চাইলে সে বলেন যে রবিউল ইসলাম বিদ্যালয়ে আর আসে না। সে বিদ্যালয় থেকে চলে গেছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক হতে হলে তাকে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস সহ বি এড ডিগ্রি থাকতে হবে। তাছাড়া তাকে শিক্ষক হিসাবে দশ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এই প্রসঙ্গে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান বলেন তার ফাইল আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠায়নি। যদি কোন ভাবে যেয়ে থাকে তার যে সমস্যা আছে সেই সমস্যার প্রেক্ষিতে সে এমপিও ভুক্ত হতে পারবে না।
ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম বলেন যে তার ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। তাছাড়া তার সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা।