ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ফুলবাড়ি গ্রামের প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক রেজাউল করিমের মেয়ে জান্নাতুল নূর মৌমিতা।মৌমিতা স্কুল জীবনের শেষের দিকে ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে রাজিব হোসেনের সাথে।সম্পর্কের শুরুতেই রাজিব আর মৌমিতার প্রেমের সম্পর্ক মেনে নেইনি মৌমিতার বাবা ও তার পরিবারের লোকজন।কিন্তু রাজীব মনে প্রাণে মৌমিতার জন্য পাগল ছিল। মৌমিতার পরিবারের থেকে রাজিবের পরিবার একটু অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল।পরিবার গরিব হওয়ার কারণেই মৌমিতার বাবা তাদের সম্পর্ক মানতে পারেনি।তিনি একজন স্কুল শিক্ষক চেয়েছিলেন মেয়েকে ভালো চাকুরিজীবী ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবেন।কিন্তু সেই স্বপ্ন তিনি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।বাস্তবিক অর্থে মৌমিতা রাজিবকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে ফেলে।
স্কুল জীবন শেষ করে মৌমিতা কলেজে ভর্তি হন।আর রাজিব আগে থেকেই বারোবাজার কবি নজরুল কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়তো।রাজীব আর মৌমিতার প্রেমের সম্পর্ক বেশি গভীর দেখে মৌমিতার বাবা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র দেখতে শুরু করেন।বিষয়টি জানতে পারে মৌমিতা রাজিবকে চাকরি কিংবা কাজকর্ম করার জন্য অনুরোধ জানান। মৌমিতাকে পাবার জন্য রাজিব অল্প বয়সেই কাজের জন্য মালোশিয়া পাড়ি জমান।
বিয়ের জন্য মৌমিতাকে চাপাচাপি করলে সে কৌশলে সময়ক্ষেপন করে রাজিবের জন্য অপেক্ষা করে।হঠাৎ বিদেশ থেকে ছুটিতে এসে রাজিব গত১০/০৪/২০২৩/ তারিখে মৌমিতাকে কোর্টের মাধ্যমে গোপনে বিয়ে করেন।
আর এই গোপনে বিয়ে করায় কাল হয়ে দাঁড়ায় মৌমিতার জীবনে।রাজিবের সাথে গোপনে বিয়ে কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি মৌমিতার পরিবারের লোকজন।বিশেষ করে মৌমিতার বাবা এবং খালাতো দুলাভাই ডাক্তার মাইনুল।এজন্য তাঁরা মেয়েকে এবং রাজিবের বাড়িতে চাপাচাপি নানা ধরনের হুমকিধামকি দিতে থাকে।শত কষ্টের পরেও মৌমিতা আর রাজিব সংসার করতে থাকে।কিন্তু এটা কোনভাবেই মানতে পারেনি রেজাউল করিম আর ডাক্তার মাইনুল।অতিরিক্ত পারিবারিক চাপের কারণে এক সময় রাজীবকে খোলা তালাক দিতে বাধ্য হয় মৌমিতা।সেকারণেই মৌমিতার বাবা জোরপূর্বক ১১/০৫/২০২৩/ তারিখে তালাক করিয়ে নেন।রাজিব অবশ্য সেই তালাকের কাগজ সই করেনি।তারপরওে মেয়ের বাবা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে রাজিবের বাড়িতেপৌঁছে দেন তালাকের কাগজ।কিন্তু তালাকের পরেও রাজিবের সাথে আবারও সম্পর্ক তৈরি হয় দু’জনার।এজন্য রাজিব আবারো মৌমিতার সাথে যশোরের একটি কাজী অফিসে বিবাহ বন্ধন আবদ্ধ হন।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দুই পরিবারের মধ্যে দেখা দেয় আরো বেশি চরম দ্বন্দ্ব।রাজিবের সাথে দ্বিতীয়বার বিবাহ করায় মৌমিতার বাবা এবং দুলাভাই আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।দু’বার বিয়ে করার পরেও রাজিব আর মৌমিতা ভালোভাবে সংসার করতে পারেনি পারিবারিক অশান্তির কারণে।এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই একপর্যায়ে মৌমিতার বাবা বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে বলে তোমার কারনে আমার কি বিষ খেতে হবে?তুমি আর রাজীবের বাড়িতে সংসার করতে পারবে না। তোমাকে আমরা ভালো ছেলের সঙ্গে নতুন করে বিয়ে দেব।মৌমিতা তখন বলে বাবা আমি রাজীবকে বিয়ে করেছি তার সঙ্গেই সংসার করবো তার গর্ভে রাজিবের সন্তান আছে বলে জানান।সে কারণেই ক্ষিপ্ত হয়ে মৌমিতাকে ব্যাপক আকারে বকাবকি ও মারধর করে তাঁর বাবা।এমনকি মৌমিতার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করে দেন তার দুলাভাই ডাক্তার মাইনুল।জানা যায়গত কুরবানীর ঈদের এক সপ্তাহ আগে মৌমিতার বাবা তার এক বন্ধুর ছেলের সাথে ঝিনাইদহ আরাপপুর এলাকায় জোরপূর্বক বিয়ে দেন।কিন্তু রাজিবের সাথে যে দ্বিতীয়বার কাজী অফিসে বিয়ে হয় সেই তালাক দেননি মৌমিতা।একজনের স্ত্রীকে ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী তালাক না দিয়ে কিভাবে অন্যজনের সঙ্গে বিবাহ দেওয়া যায় সেটা কারো বোধগম্য নয়।রাজিবের সাথে বিয়ের কথা মৌমিতার নতুন শ্বশুর বাড়ির লোক জানতে পারে।মৌমিতার মোবাইলে রাজিবের সাথে বেশ কিছু আন্তরিক ছবি নতুন স্বামী দেখতে পাই।এ কারণে মৌমিতার সাথে নতুন স্বামীর মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।মৌমিতার নতুন স্বামী বিষয়টি মৌমিতার বাবাকে জানান।এঘটনাই কষ্ট পেয়ে মৌমিতা রাগ করে তার বাবার বাড়িতে চলে আসে।পারিবারিক অশান্তি ও আগের স্বামী রাজীবের প্রতি দুর্বলতার কারণে মৌমিতা গত ২৮/০৭/২০২৩/ তারিখে নিজ বাবার বাড়ি ফুলবাড়ি বিষ পান করে।বিষপান করার পরে তাঁকে বারবাজার থেকে ডাক্তার দেখিয়ে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।সেখানেও তার শারিরীক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয় ঢাকায় নেওয়ার পথে মৌমিতা গত ২৯/০৭২০২৩/ তারিখে মারা যান বলে জানা যায়।
হ্যাঁ মৌমিতার জীবনের গল্পটা এমনই সিনেমার মতো শুনতে শোনা গেলেও এমনটি উঠে এসেছে বিভিন্ন অনুসন্ধানে।
তবে ঘটনায় কেন্দ্র করে মৌমিতার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন মৌমিতার সঙ্গে রাজিবের আন্তরিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও মৌমিতার নতুন শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার কারনে মৌমিতা বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন।অন্যদিকে রাজিবের পরিবারের দাবি তার ছেলে সংসার করার জন্য মৌমিতাকে বিয়ে করেছিল কিন্তু মৌমিতার বাবা ও তার চাচাতো দুলাভাই মাইনুল মৌমিতাকে সংসার করতে দেয়নি।তারা বারবার বলেছে তাদের পায়ে নখের যোগ্য তাঁরা না।এমনকি আমার ছেলের সন্তানকেও তারা নষ্ট করে দিয়েছে আমরা এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই।এদিকে মৌমিতার আত্মহত্যার প্ররোচনায় বিচার চেয়ে মৌমিতার পরিবারের লোক মানববন্ধন করেছেন। আবার মৌমিতা কে তার বাবা ও পরিবারের লোকজনের অত্যাচারের কারণে সে বিষপান করেছেন। কিন্তু উদ্দেশ্য মূলকভাবে রাজিবের পরিবারের উপর শিক্ষা দোষারোপ করছেন বলে তাঁরা ন্যায় বিচার পাবার লক্ষ্যে এবং সঠিক সত্য তুলে ধরার জন্য কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবে ৩১/০৭/২০২৩/ তারিখে সাংবাদিক সম্মেলন ও ১ আগষ্ট মঙ্গলবার বিকালে বারোবাজার এলাকায় স্থানীয়দের সাথে নিয়ে মানববন্ধন করেন।শুধুমাত্র আত্ম অহংকার ও পারিবারিক কলহের কারণে জীবন দিতে হলো একটি সুন্দর জীবনকে এমনটি জানান স্থানীয়রা।