বেড়া(পাবনা) প্রতিনিধিঃ পাবনার বেড়া বাজারের প্রাণকেন্দ্রে জরার্জীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পৌর সুপার মার্কেটটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিগত ২০১৩ সালে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ নোটিশ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে কোনো এক রহস্যজনক কারণে উচ্ছেদের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। সম্প্রতি পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যবসায়ীদের আবারো নোটিশ দিয়েছে। এদিকে পার্শ্ববর্তী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও অবিলম্বে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে ফেলার দাবি জানান।
ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৮৩ সালে বেড়া পৌরসভার তৎকালীন মেয়র (মরহুম) এস এস আমির আলী ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গাটি অবৈধভাবে পৌরসভার দখলে নিয়ে একতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে পৌর সুপার মার্কেটটি নির্মাণ করেন। ওই সময় বিল্ডিং নির্মাণে বেশ কয়েকবার নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে। মর্কেট নির্মাণ শুরু করার আগে সেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সকাল-বিকেল অস্থায়ী দোকান পেতে ব্যবসা করতেন। তাদেরকে মার্কেট নির্মাণ করে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়। মার্কেট নির্মাণ করার পরে তাদেরকে আর দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
পরবর্তীতে আব্দুল বাতেন বেড়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯২ সালে একতলা ফাউন্ডেশনের ওপর আরো দুইতলা মার্কেট নির্মাণ করেন। দোতলাতে দোকান এবং তিনতলাতে অডিটোরিয়ামসহ পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়। এই ভবনের একতলা ও দোতলায় মোট ৫০ জন ব্যবসায়ী ব্যবসা করছেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ ভবনের পলেস্তারা ও খোয়া খসে পড়ছে। এ অবস্থায় ২০১৩ সালে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। তবে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এটি ভেঙে ফেলা হয়নি। সম্প্রতি পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটি পুনরায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে উচ্ছেদ নোটিশ দেয়।
পৌর সুপার মার্কেটের পশ্চিম-উত্তর কর্ণারের ১৭ নম্বর দোকানের ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, এই দোকান থেকেই আমার সংসার চলে, অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই ঝুঁকি নিয়েই এখানে ব্যবসা করছি। মাঝে মধ্যে সিলিং থেকে পলেস্তরা খসে পড়ে। ভয় হয় না জানি কখন পুরো ছাদটাই মাথার উপর ধসে পড়ে। কাসা-পিতলের ব্যবসায়ী আব্দুল মমিন মোল্লা বলেন, যখন ছাদের দিকে তাকাই ভয়ে আঁতকে উঠি। উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, ১০ বছর আগে একবার নোটিশ দিয়েছিল। সম্প্রতি আবারো নোটিশ দিয়ে দোকান ঘর ছেড়ে দেয়ার কথা বলছে।
পৌর মার্কেটের ১৬ নম্বর দোকানটি চাল-ডাল, মসলার। দোকানের মালিক লিটন চৌধুরী বলেন, এখন ভবনের অবস্থা খুব নাজুক। আমাদের অন্য কোথাও পনর্বাসন করে এটা ভেঙে ফেলা দরকার। কিন্তু পুনর্বাসন না করে ভেঙে ফেললে আমরা যাবো কোথায়? এই ব্যবসায়ী আরো বলেন, বৃষ্টি নামলে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। এর মধ্যেই ব্যবসা করতে হচ্ছে। যাওয়ার যে আর কোনো জায়গা নেই। জামাল নামে আরেক দোকান মালিক বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। কিন্তু অন্য কোথাও দোকান নিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই। তাই এখানে পড়ে আছি।
পৌর সুপার মার্কেট লাগোয়া দক্ষিণ পাশের মোল্লা সুপার মার্কেটের সবুজ মোল্লা, লিটন মোল্লা আব্দুল জলিল সুপার মার্কেটের ওয়াহিদ জামান, হাজী সুপার মার্কেটের আবুল বাসার, হাকিম ও দক্ষিণ পাশের রেজাউল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, ইমরান হোসেন, লিটন হোসেনসহ অনেক ব্যবসাী জানান, পৌর মার্কেটটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী হলেই ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
এ বিষয়ে বেড়া পৌরসভার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) হারুন-আর-রশিদ জানান, ভবনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১০ বছর আগেই চিহ্নিহ্নত হয়ে আছে। তখন থেকেই ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হয়। সম্প্রতি বর্তমান মেয়র এস এস আসিফ সামস রঞ্জন পরিষদের সাথে আলোচনা করে পৌর মার্কেটটি ভেঙে ফেলার চূড়ান্ত সিদ্ধান নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মাসিক ভাড়াও স্থগিত করা হয়েছে। তিনতলায় অবস্থিত পাবলিক লাইব্রারি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ীদের দোকান ছেড়ে যাওয়ার নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী বলেন, মার্কেটটি যে খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তির ওপর নির্মিত, এটি তিনি জানতেন না। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭