কেএম সবুজঃ ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার ডিইপিজেড- আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কের বাইপাইল মোড় চত্বরের পাশে অবস্থিত একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ভিতরে শ্রমিককে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) খসরু পারভেজের বিরুদ্ধে। অটোরিকশা থেকে সরকারি জরিমানার কথা বলে রশিদ ছাড়া টাকা আদায় করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিক।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান ওই ভুক্তভোগী পোশাক শ্রমিক মো. ছালেক মিয়া। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরে হলেও আশুলিয়ার বুড়ির বাজার এলাকায় ভাড়া থাকেন। এর আগে গত শনিবার ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারসহ পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে বাইপাইলে অবস্থিত টি.আই জাহাঙ্গীর ক্রসিং পুলিশ বক্সে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। সেই পুলিশ বক্সের দায়িত্বে ছিলেন খসরু পারভেজ।
মারধরের শিকার ছালেক মিয়া বলেন, সেদিন আমার পূর্বপরিচিত শফিকুলের অটোরিকশা বাইপাইলে আটক করে ২ হাজার টাকা জরিমানা করে ট্রাফিক পুলিশ। তার কাছে টাকা না থাকায় আমাকে খবর দেয়। পরে আমি ও আমার বন্ধু আব্দুল জলিলসহ পুলিশ বক্সে উপস্থিত হই। গিয়ে দেখি টিআই খসরু সাহেব বসে আছেন। তাকে জরিমানা মওকুফ করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেন সরকারি জরিমানা কমানোর কোন সুযোগ নেই। পরে আব্দুল জলিল টিআই খসরুর হাতে জরিমানা বাবদ ২ হাজার টাকা দিলে ক্ষেপে উঠেন তিনি।
তিনি বলেন, পুলিশ বক্সে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। কেন ক্যামেরার সামনে টাকা দেয়া হল? আব্দুল জলিল বলে, সরকারি ফাইন যেহেতু, ক্যামেরার সামনে দিলেই কি আর পেছনে দিলেই কি? পরে আব্দুল জলিলসহ আমাকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়। আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। আমাকে আবার ডেকে নেয় পুলিশ বক্সের ভেতর। তারপর আমাকে ইচ্ছামতো চড় ঘুষি কিল থাপ্পড় মারতে থাকে। আমাকে গ্রেফতার করার ভয়ও দেখায়। পরে পোশাক কারখানায় আইডি কার্ড দেখালে আমাকে ছেড়ে দেয়।
ভুক্তভোগী আব্দুল জলিল বলেন, শফিকুলের রিকশার জন্য পরে ঠিকই টাকা দিতে হয়েছে। ২ হাজার টাকা দেয়ার পর রিকশা ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু এ টাকার কোন রশিদ দেয়নি। যদি সরকারি জরিমানাই হয় তাহলে সিসি ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে তার সমস্যা কি? এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তিনি।
কথা হয় রিক্সাচালক শফিকুলের সাথে। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার এক রোগীকে হাসপাতালে নামিয়ে ফেরার পথে আমার রিক্সাটি আটক করে পুলিশ বক্সের ট্রাফিক পুলিশেরা। পরে আমি আব্দুল জলিল ও ছালেক ভাইকে জানাই। তারা আসলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। টিআই খসরু সাহেবের মুখের ভাষা অনেক খারাপ। টাকা নিয়ে ঝামেলা হওয়ার পর আমাকে আর সেখানে থাকতে দেয়নি। আমার কাছ থেকে জরিমানার কথা বলে টাকা ঠিকই রেখেছে কিন্তু কোন রশিদ দেয়নি। যদিও আমার রিকশা ফেরত দিয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত টিআই খসরু পারভেজ বলেন, কাজ করলে অভিযোগ থাকবেই। আপনারা যাচাই করে দেখেন। যারা কাজ করেনা তাদের কোন অভিযোগ থাকেনা। এসপি বরাবর লিখিত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ অভিযোগের ব্যাপারে কিছু জানিনা। এ ব্যাপারে আমার কোন মাথাব্যাথাও নেই।
এবিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, এমন অভিযোগ আমার কাছে এখনও পৌঁছায়নি। সিসি ক্যামেরার সামনে মারধরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা অনেক সময়ই এমন অভিযোগ পাই। তবে তদন্ত করলে দেখা যায় সত্যতা নেই। রশিদ ছাড়া টাকা আদায়ের তো কোন প্রশ্নই ওঠেনা। যদি এমন কিছু হয় তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে পুলিশি হয়রানির হাত থেকে নিজের অটোরিকশা বাঁচাতে এক রিক্সাচালক নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ২০১৭ সালের ৩০ জুন শুক্রবার বাইপাইলের এই ট্রাফিক বক্সের সামনেই আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় শামীম সিকদার (৩৫), এতে তার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে যায়।