বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনায় কোটবাড়িয়া কাদেরীয়া দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষা না নিয়েই নিয়োগের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। লেনদেনের অভিযোগে দু’বার নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পরেও তৃতীয় বার নিয়োগ দিতে সফল মাদ্রাসা কতৃপক্ষ। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিবের দাবি দিনের বেলা প্রতিষ্ঠানে পরিক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় রাতে সার্কিট হাউজে।
মাদ্রসা শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে নেয়ার কথা। ডিজির প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পরীক্ষার্থী স্ব- শরীরের উপস্থিত থাকার পর নেয়া যাবে নিয়োগ পরিক্ষা। কিন্তু ডিজির প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানে না আসায় কোটবাড়িয়া মাদ্রাসায় নিয়োগ নিয়ে তৈরী হয়েছে ধূম্রজাল। পরে জানা যায় নিয়োগ পরিক্ষা ঐ দিন রাতেই সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ নিয়োগ পরিক্ষার জন্য কোটবাড়িয়া কাদেরীয়া দাখিল মাদ্রাসায় ডিজির প্রতিনিধি বাদে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ ও পরিক্ষার্থীরা স্ব-শরীরে দুপৃর আড়াইটায় উপস্থিত হয়। এর আগে দু-দুবার স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে পরীক্ষা স্থগিত হলে এবার নিয়োগ পরীক্ষায় ঝামেলা এড়াতে পুলিশ ফোর্স প্রেরন করা হয়। পরিক্ষা শুরু হবার আগেই স্থানীয়রা গোপন নিয়োগ ও লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ তুললেও এবার আর কর্নপাত করেননি কতৃপক্ষ। ডিজির প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে পরিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে স্থানীয়দের ক্ষোভ ধিরে ধিরে প্রকাশ পায়। অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় সাংবাদিকরা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে চাইলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। সুপারের নির্দেশে দ্রুত গেট তালাবদ্ধ করে রাখেন মাদ্রাসা কতৃপক্ষ। অন্যদিকে মাদ্রাসার সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাদের নিয়োগ পরিক্ষার কাগজপত্র ছিনতাই হয়েছে মর্মে সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করেন। স্থানীয়দের ক্ষোভে পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিত করে ৫ টার দিকে দ্রুত প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, মাদ্রাসার সভাপতি বড় অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করে তিনটি পদে নিয়োগের জন্য আগেই তিনজনকে চুড়ান্ত করেন। তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরিক্ষার সময় সম্পর্কে কিছুই জানেন না। মাদ্রাসার সভাপতির কাছ থেকে কোন কাগজ ছিনতাই করা হয়নি। মাদ্রাসা সংলগ্ন তার বাসভবন। পুলিশ ফোর্স উপস্থিত। তিনি স্থানীয়দের বিরুদ্ধে নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র ছিনতাইয়ের মামলা করেন।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ স্বপন বলেন, নিয়োগ নিয়ে হাজারো অভিযোগের পরও কিভাবে সার্কিট হাউজে নিয়োগ পরিক্ষা হয় তা আমার জানা নেই। ৩০ তারিখ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, পুলিশ ও স্থানীয়দের সামনে থেকে কে কাগজ ছিনতাই করবে! সাংবাদিকদের ঐ দিনের ভিডিও ফুটেজে সবই আছে। আমাকে সহ স্থানীয়দের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মামলা করেছেন সভাপতি। নিয়োগ পরিক্ষায় লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় ও নিজ প্রার্থীদের চাকুরির জন্য এমন নিয়োগ পরিক্ষার ও ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছেন সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাদের।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা কর্মী পদে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মোঃ রুবেল বলেন- বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সার্কিট হাউজে পরিক্ষা দিয়েছি। অথচ আয়া পদে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মোসাঃ রিপা বলেন, সন্ধার পরে সার্কিট হাউজের একটি কক্ষে পরিক্ষা দিয়েছি।
এ বিষয়ে কোটবাড়িয়া মাদ্রাসার সভাপতি মাওলানা কাদের হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুপার মাওলানা কাদের হোসেনের অবসরের পর ২০২০ সাল থেকে ২০২২ এর আগস্ট পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পালন করেন মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক খলিলুর রহমান। বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার পদে দ্বায়িত্ব পাবার কথা সহকারী মৌলভী মোঃ আব্দুল করীমের কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে দায়িত্ব দেয়া হয় খলিলুর রহমানকে। তার অবৈধ নিয়োগ বানিজ্যর অভিযোগে অত্র মাদরাসায় বিগত দু-দুবার নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিত করা হয়।
এবিষয়ে মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, আমাকে ভোটের মাধ্যমে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় আমি যতটুকু জানি সভাপতি বরাবর আবেদন আহবান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অত্র মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব মাওলানা মো: আঃ করীম বলেন, ডিসি স্যার ও এমপি সাহেব বলেছেন সার্কিট হাউজে পরিক্ষা নিতে। ডিজির প্রতিনিধি ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি সার্কিট হাউজে পরিক্ষা নিতে চায় তবে আমার কি করার আছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: জামাল উদ্দিন বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে গেলেও ডিজি অফিসে এক কপি ছিল। ডিজির প্রতিনিধি কাগজপত্র নিয়ে আসছে, নতুন খাতাপত্র কিনে সন্ধায় সার্কিট হাউজে বসে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। বিষয়টি এমপি ও ডিসি স্যার জানেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ও ডিজির প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজা ইয়াসমিন বলছেন, স্থানীয় ঝামেলার কারণে সার্কিট হাউজে পরীক্ষা নিতে হয়েছে। এমপি ও ডিসির মৌখিক অনুমতিক্রমে সার্কিট হাউজে পরীক্ষা নিয়েছি।
বরগুনা সার্কিট হাউজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনডিসি ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মাহফুজা ইয়াসমিন নামে কোন কর্মকর্তা সার্কিট হাউসে ছিলেন না। তার নামে কোন রুম বুকিং দেওয়া হয়নি।
কোটবাড়িয়া মাদ্রাসায় নিয়োগ পরিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, সার্কিট হাউজে কোন নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। পরীক্ষার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com
❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।