আনোয়ার হোসেন,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুর কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বেশ কয়েকটি অনুমোদনহীন ইটভাটায় কাঠ দিয়ে বছরের পর বছর ধরে ইট পোড়ানো হলেও তা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। এ উপজেলায় ২০টি ইটভাটা রয়েছে তার মধ্যে ড্রাম চিমনি (বাংলা) প্রায় ৯টি। এসব ইটভাটায় জ¦লানী হিসেবে ব্যবহার করছে কাঠ। এতে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমির মাটি।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ইটভাটা স্থাপন করতে হাইব্র্রিড হফম্যান, জিগ-জ্যাগ, ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন্ অথবা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিধান রয়েছে। তবে উপজেলার চর কাদিরা, তোরাবগঞ্জ, চর লরেঞ্চসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারের নীতিমালা তোয়াক্কা না করে অনুমোদন ও পরিবেশ অধিফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই একাধিক ইটভাটা চলছে। সবগুলো ইটভাটায় লোকালয়ের পাশে এবং ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে।
উপজেলায় বেশীভাগ ইটভাটায় প্রতিদিন শতশত মন কাঠ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ভাটা শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানাগেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে নসিমন, ট্রাক্টর করে কাঠ সংগ্রহ করা হয়। আর সেই কাঠ দিয়েই বছরের পর বছর ধরে চলছে এই ইটভাটাগুলো।
কমলনগর উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানায়, কমলনগর উপজেলায় প্রায় ২০টি ইটভাটা আছে। যার মধ্যে জিকজ্যাক ১১ টি থাকলেও নিয়ম মানছেন না অনেকেই, ঐছাড়া ডাম চিমনী আছে ৯টির যার বেশিরভাগই চলছে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চর কাদিরা ইউনিয়নে এডভোকেট বেলাল মালিকানাধীন মেসার্স রহিমা ব্রিক্স, মোঃ আরিফ হোসেন মালিকানাধীন মেসার্স আকাশ ব্রিক্স, জয়নাল আবেদীন মালিকানাধীন মেসার্স সুমাইয়া ব্রিক্স, বাহার মোল্লা মালিকানাধীন মেসার্স লতিফ ব্রিক্স, তোরাবগঞ্জ গ্রামে মির্জা আশরাফুজ্জামান রাসেল মালিকানাধীন হাসিনা ব্রিক্স, মোঃ আরিফ হোসেন মালিকানাধীন মেসার্স মদিনা ব্রিক্স, মোঃ নিজাম উদ্দিন মালিকানাধীন সেসার্স লাবন্য ব্রিক্স, চর ফলকন গ্রামে মোঃ ফরহাদ মিয়া মালিকানাধীন মেসার্স ফরহাদ ব্রিক্সসহ ২০টি ইটভাটা রয়েছে।
কমলনগর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানাযায়, নভেম্বর ২০২২ মাসে চর পাগলা গ্রামে মের্সাস এল বি এম, মের্সাস মদিনা ব্রিক্স,ভবানীগঞ্জ ফেন্ডর্স ব্রিক্স, চর বসু গ্রামের আকাশ ব্র্রিকস এবং ডিসেম্বর মাসে চর জাঙ্গালীয়া গ্রামের মের্সাস সবুজ ব্রিকসে অভিযান পরিচালনা করলেও স্থায়ীভাবে ধবংস না করায় কিছুক্ষণ পরে আবারও চালু করেন মালিক পক্ষ।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০)-এর ১২ ও ৪(২) (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফসলি জমিতে অথবা ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করা দন্ডনীয় অপরাধ। তবে লোকালয়ে এবং ফসলি জমিতে স্থাপিত কমলনগর উপজেলার এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন অথবা পরিবেশ অধিদফতরের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, যারা ইটভাটা করছেন তারা প্রভাবশালী। এ কারণে ইটভাটার ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলেও মানুষ ভয়ে কিছু বলছে না।
অনুমোদন ছাড়াই কিভাবে ভাটা চলছে জানতে চাইলে চর কাদিরা ইউনিয়নের লতিফ ব্রিকস এর মালিক বাহার মোল্লা জানান, সবাই যেভাবে চালায় আমিও সেভাবে চালাই।
অনুমোদন ছাড়া ব্রিকস ফিল্ড চালান এ বিষয়ে মেসার্স ফরহাদ ব্রিক্স এর মালিক মোঃ ফরহাদ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি ধাম্বিকতার সাথে জানান, এতে আপনার সমস্যা কি? আপনি আমার সাথে দেখা করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের লক্ষ্মীপুর জেলার সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান জানান, আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অভিযান পরিচালনা করার জন্য বলেছি এবং প্রশাসন অভিযান পরিচালনাকালে আমরা সহযোগীতা করবো।
অনুমোদনহীন অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধসহ কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ ধ্বংস বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা অবৈধ ইটভাটা পরিচালনায় দায়ে জরিমানাসহ তাদের সতর্ক করেছিলাম। এরপরও যদি কেউ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইটভাটা চালু করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।