ঢাকাবুধবার , ৩ আগস্ট ২০২২
আজকের সর্বশেষ খবর

আশুলিয়ার আলী নূর হত্যাকারীকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪


আগস্ট ৩, ২০২২ ৪:২৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সাভারের আশুলিয়ায় ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আলী নূর হত্যা মামলার মূল আসামী আহিনা খাতুন (২৯)’কে নারায়নগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল সাভারের আশুলিয়ায় চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আলী নূর বিশ্বাস হত্যা মামলার প্রধান আসামী মোছাঃ আহিনা খাতুন (২৯)’কে গতকাল রাতে নারায়নগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় যে, ভিকটিম আলী নূর বিশ্বাস মাগুড়া জেলার শ্রীপুর থানার হোগলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। সে চাকুরির সন্ধানে ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে প্রথমে গার্মেন্টসকর্মী হিসাবে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে বিগত কিছুদিন যাবৎ অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।

আসামীর বক্তব্য অনুযায়ী প্রায় তিন বছর আগে ভিকটিমের সাথে আসামীর পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে গভীর সখ্যতা গড়ে উঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তারা দুজনই একসাথে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমতাবস্থায় বিবাহ ব্যতিরেকে তারা নিজ নিজ পরিবারকে না জানিয়েই স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় বিভিন্ন বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকে।

তবে তার বক্তব্যে অনুযায়ী গত ০৩ বছরে তারা ০৫ বার বাসা পরিবর্তন করেছে। জুলাই মাসের শুরুতে হত্যার শিকার ভিকটিম আলী নূর বিশ্বাস কিছু দিনের জন্য মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার গ্রামের বাড়ি গেলে আহিনা খাতুন জানতে পারে যে, গত ১৪ জুলাই ২২ইং  তারিখে আলী নূর তার গ্রামের বাড়িতে ভিকটিম অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। ভিকটিম আলী নূর ১৭ জুলাই ঢাকায় ফিরে আসে। ভিকটিম আলী নূর এর বিয়ের কথা জানতে পেরে আসামীর মনে প্রচন্ড ক্রোধ এবং প্রতিহিৎসার সৃষ্টি হয়।

কিন্তু প্রতিহিৎসা ও ক্রোধের বিষয়টি সে আসামির নিকট গোপন রেখে ভিকটিম আলী নূর’কে গোপনে হত্যার পরিকল্পনা করে। তাদের মধ্যকার মান-অভিমান চলতে থাকলেও ভিকটিম গ্রামের বাড়ি হতে আশুলিয়ায় আসার পর আসামী দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ভিকটিমকে কৌশলে গত ২৯ জুলাই ২২ইং  তারিখে আশুলিয়ার জিরাবো নামাপাড়া এলাকায়  হাজ্বী দেলোয়ার বেপারী এর টিনশেড বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতো।  অবশেষে, গত ৩০জুলাই ২২ ইং রাতের খাবার শেষে উভয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।

কিন্তু আসামী ঘুমের ভান করে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সে ঘুমায়নি। হত্যার পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক আসামি আহিনা খাতুন সেদিন ভোররাতে ভিকটিমকে ঘুমন্ত অবস্থায় বটি দিয়ে মাথা, গলা এবং বুকে নৃশংশভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর ঘরে বস্তাবন্দি লাশ রেখে লাতা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উধাও হয়ে যায়।

  এরপর দীর্ঘ সময়  নূর আলীর ফোন বন্ধ ও কোন যোগাযোগ না করতে পেরে ০১ আগস্ট প্রায় ২ টার দিকে সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন জিরাবো এলাকায় হাজ্বী দেলোয়ার বেপারীর ভাড়া দেওয়া টিনশেড বাসায় গিয়ে দেখতে পায় যে রুমের দরজা বাহির হতে তালাবদ্ধ।

তারা বাসার মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জানালা খুললে রুমের ভিতর হতে তীব্র দুর্গন্ধসহ মেঝেতে কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় চিত হয়ে ভিকটিম আলী নূরের লাশ দেখতে পায়। পরবর্তীতে আশুলিয়া থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘরের তালা ভেঙ্গে রুমের ভিতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে।

বিষয়টি নিয়ে আলী নূরের বড় ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে  মামলার সূত্র ধরে র‌্যাব-৪ আসামী গ্রেফতারে কঠিন অভিযান শুরু করে।

পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে  র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে নারায়নগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকা হতে আসামী মোছাঃ আহিনা খাতুন (২৯)’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

হত্যাকারী মোছাঃ আহিনা খাতুন (২৯)’ নীলফামারীর একটি স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে। তাদের ০৫ ভাইবোনের মধ্যে সে চতুর্থ। ২০১২ সালে জনৈক মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে তার প্রথম বিবাহ হলেও পারিবারিক কলহের জেরে দেড় বছর পরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। উক্ত পরিবারে তার ০১ টি ছেলে সন্তান রয়েছে।

পরবর্তীতে জীবিকার তাগিদে তার সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে ২০১৮ সালে ঢাকায় আসেন এবং আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টস এ চাকুরি নেন। চাকুরির সুবাদে ভিকটিমের সাথে তার পরিচয় হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার মতামত বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com ❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।