মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুরের চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নজরুল ইসলাম (৪২)’কে ০৭ বছর পর ঢাকা জেলার সাভার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুরের চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার দীর্ঘ ০৭ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ নজরুল (৪২)’কে ৩০ জুলাই ২০২২ তারিখ রাত অনুমান ৯ টার সময় ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন হেমায়েতপুরের জয়নাবাড়ী এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয় ।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হরিরামপুর থানার কদমতলার কোমেলা বেগমের ছেলে ইদ্রিস আলী পেশায় একজন রিক্সাচালক। ইদ্রিসের সাথে মানিক নগর গ্রামের জোনাব আলীর মেয়ে সেলিনা বেগমের ২০০৫ সালে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ হয়। তাদের ঘরে ০১ টি মেয়ে ও ০১ টি ছেলে সন্তান থাকলেও প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। সেলিনার সাথে তার স্বামী ইদ্রিসের দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হওয়ার সুযোগে আসামী সাত্তার ইদ্রিসের বাড়ী গিয়ে স্বামী স্ত্রীর বিরোধ মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে সেলিনার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে।
এরপর আসামী সাত্তার সেলিনাকে দিয়ে স্বামী ইদ্রিসের বিরুদ্ধে আদালতে নারী শিশু নির্যাতন মামলা করায়। মামলার কারণে সেলিনা ঘর সংসার ফেলে আদালতে যাওয়া আসা করতে থাকে। সেলিনাকে তার স্বামী ইদ্রিস, আসামী সাত্তারের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ও আদালতে যাওয়া আসায় বাধা দিলে সেলিনা ইদ্রিসকে কৌশলে হত্যা করার জন্য সাত্তার, নজরুল ও দুলালের নামের তিনজন ব্যক্তির সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র করে।
তারপর পরিকল্পনা অনুযায়ী সেলিনা সন্তানসহ স্বামী ইদ্রিসের রিকসাযোগে তার বাবার বাড়ীতে চলে যায় এবং মোবাইলে সাত্তার, নজরুল ও দুলালকে সেখানে আসতে বলে। ইদ্রিসসহ সকল আসামী সেলিনার বাবার বাড়ীতে খাওয়া দাওয়া শেষে সেলিনা কৌশলে তার স্বামী ইদ্রিসকে চেতনানাশক কিছু ঔষধ খাইয়ে দেয়।
এরপর ইদ্রিস তার রিক্সা চালিয়ে নিজ বাড়ীর সামনে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেলিনা ও নজরুল তাকে ধরাধরি করে ইদ্রিসের বাড়ীতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২৮ নভেম্বর ২০১১ ইং তারিখ রাত অনুমান ১২.০০ টার সময় থেকে ২ টার মধ্যে আসামী সাত্তার, দুলাল, নজরুল ও সেলিনা ভুক্তভোগী ইদ্রিসের গলায় প্রথমে নাইলনের রশি পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে এবং একই সাথে তারা ইদ্রিসের হাত, পা ও মাথা চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করে নৃসংশ ভাবে হত্যা করে।
এরপর কাঁথা দ্বারা তার মৃতদেহ ঢেকে রেখে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ২৮ নভেম্বর ২০১১ তারিখে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কর্তৃক ভুক্তভোগীর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলে ময়না তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে ভুক্তভোগীর মা কোমেলা বেগম বাদী হয়ে হরিরামপুর থানায় সাত্তার, দুলাল, নজরুল ও সেলিনার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-০২ তারিখ ০৫/০২/২০১৩ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ দঃ বিঃ।
উক্ত মামলার এজাহারনামীয় আসামি নজরুলকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে উক্ত আসামি ৩৮ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পায়।
উক্ত ঘটনার পর হতে আসামী নজরুল দীর্ঘ প্রায় ০৭ বছর যাবত পলাতক ছিল।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, গত কিছু দিন ধরে আসামি নজরুল ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন হেমায়েতপুর জয়নাবাড়ী এলাকায় বসবাস করে আসছিলো। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আসামী নজরুল ঢাকা, আশুলিয়া ও সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতো এবং এক জায়গায় সে বেশিদিন অবস্থান করতো না। তাছাড়াও পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে সে প্রতিনিয়ত পেশা পরিবর্তন করতো। সে বিভিন্ন সময় ভ্যান চালক, কাঁচা মালের ব্যবসা, সবজি বিক্রেতা কিংবা হোটেলে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হন্তান্তর করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭