ফেনীর সোনাগাজীর উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শকুনিয়া খালটি দখল হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশন বন্ধের পথে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে নোটিশ ও উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরও কোনো লাভ না হওয়ায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরচান্দিয়া ও চরদরবেশ ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সীমান্তবর্তী শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ৪০ ফুট প্রশস্তের শকুনিয়া খালটি জমাদার বাজার এলাকার অংশে সময়ের ব্যবধানে এখন মৃতপ্রায়। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বাজারের পাশে খালের ওপর জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় খালটি চিরচেনা রূপ হারিয়ে এখন হাজারো জনগণের দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পানি নিষ্কাশনের অভাবে একদিকে দুই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়, অন্যদিকে অবৈধ স্থাপনার কারণে বাজারে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। স্থানীয়রা জানান, শকুনিয়া খালটি নকশা মোতাবেক পশ্চিম দিকে জমাদার বাজারে ৪০ ফুট প্রস্থ থাকার কথা, সেখানে এখন কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুট প্রস্থ রয়েছে। বাজারের পূর্ব দিকে মাস্টার সাহাব উদ্দিনের বাড়ির পশ্চিমে নকশা মোতাবেক ৩০/৩৫ ফুট প্রস্থ থাকার কথা থাকলেও সেখানে এখন ৩/৪ ফুট রয়েছে। বাকি সব দখল হয়ে গেছে। মাস্টার বাড়ির পূর্বে খালটি অনেকটা প্রশস্ত থাকলেও খালের গভীরতা কম থাকায় পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা উপজেলা কমিশনারের (ভূমি) কাছে শকুনিয়া খাল অবৈধ দখলের বিষয়ে লিখিতভাবে অবহিত করেন। এরই প্রেক্ষিতে শুকুনিয়া খাল উদ্ধারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অবৈধ দখলদারদের নোটিশ দেন। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ৯১ নং উত্তর চরচান্দিয়া মৌজার ১ নং খাস খতিয়ানের ৮৭৩ দাগের শ্রেণী খাল এবং দক্ষিণ চরসাহাভিকারী মৌজার ১ নং খাস খতিয়ানের ৮৬৩৯ ও ৯৬৩১ দাগে শকুনিয়া খালের ওপর অবৈধ দোকানঘর ও মার্কেট নির্মাণ করায় আপনাদের বিরুদ্ধে কেন আইগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না। নোটিশের পর সহকারী কমিশনার ভূমি (সাবেক) নাছরিন আক্তার ও চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মিলনের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে কিছু অংশ উচ্ছেদ করা হলেও বেশির ভাগ অবৈধ স্থাপনা থেকে যাওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বর্ষা মৌসুমে দুই ইউনিয়নের হাজারো ফসলি জমি ও বাড়িঘরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় স্থায়ীভাবে অত্র এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শকুনিয়া খালটি উদ্ধার করে দুই ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা দূর করার আহ্বান জানান এলাকাবাসী।
চরদরবেশ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টু বলেন, বিগত সময়ে এই খাল খননের জন্য বহু চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হঠাৎ কোনো অদৃশ্য ইশারায় তা থেমে যায়। আমরা চাই শকুনিয়া খালটি অবৈধ দখলমুক্ত হয়ে জলাবদ্ধতার নিরসন ঘটুক।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিখন বণিক জানান, জমাদার বাজার এলাকায় শকুনিয়া খালের ওপর ছোট ছোট অবৈধ স্থাপনা ইতোপূর্বে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বড় স্থাপনাগুলোর বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সহায়তা চাওয়া হবে। শিগগিরই সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খালটিকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনা হবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭