সাগাইং অঞ্চলে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানকার বেশিরভাগ এলাকায় বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন সংযোগ। স্থানীয় মিডিয়া ও বিদ্রোহীদের এক সদস্যকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ১লা ফেব্রুয়ারি বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। এর ফলে বিদ্রোহীরা দেশের ভিতরে এবং বিদেশে বসে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এরই মধ্যে সামরিক জান্তাকে মোকাবিলার জন্য গঠন করেছেন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ)। মিয়ানমারের ডিভিবি নিউজ পোর্টালের এক খবরে স্থানীয় অধিবাসীদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলের পিনলেবু এলাকায় সেনাবাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। তারা বিমান থেকেও হামলা করছে।
ওইসব অধিবাসী বলেছেন, তারা বিমান থেকে হামলা ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন শনিবার রাতভর। এর আগে ফোন লাইন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পিনলেবুর পিডিএফের এক সদস্য ওই এলাকার বাইরে থেকে টেলিফোনে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। বলেছেন, বিমান থেকে হামলা চালানো হয়েছে। তবে এতে তার গ্রুপের কোনো সদস্য হতাহত হননি বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ইন্টারনেট এবং ফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার কারণে আমরা যোগাযোগ করতে পারি নি। পিডিএফের এই সদস্য নিজের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন । ওদিকে এসব সূত্রের দাবি সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। এ বিষয়ে সামরিক জান্তার এক মুখপাত্র’র ফোনে কল করা হলে কোনো জবাব দেননি।
ওদিকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আইনপ্রণেতারা ও অন্য বিরোধীদের সমন্বয়ে মিয়ানমারে যে ছায়া প্রশাসন বা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) গঠন করা হয়েছে, তারা বলেছে- এই লড়াইয়ে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে একটি রকেটচালিত গ্রেনেড, ছোটখাট অস্ত্র, গোলাবারুদ। তাদের দাবি, এই লড়াইয়ে সরকারের কমপক্ষে ২৫ সেনা সদস্য নিহত হয়েছে। গত ৭ই সেপ্টেম্বর এনইউজি জনগণকে জেগে ওঠার আহ্বান জানানোর পর সাগাইং এলাকার মতো অনেক এলাকায় রক্ত ঝরছে। ওই ঘোষণায় তারা সামরিক জান্তা ও তার সম্পদের ওপর টার্গেট করতে পিডিএফের প্রতি আহ্বান জানায়। এসব লড়াইয়ের শুরুতেই অনেকবার ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে সামরিক জান্তা। বৃহস্পতিবার থেকে তারা চিন রাজ্যে যুদ্ধকবলিত ১১টি জেলা এবং ম্যাগওয়ে অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। স্থানীয় অধিবাসী ও পিডিএফের সদস্যদের উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে মিয়ানমার নাউ নিজউ পোর্টাল। গত সপ্তাহে লড়াইয়ে একজন খ্রিস্টান পাদ্রি নিহত হওয়ার পর ভারত সীমান্তের কাছে চিন রাজ্যে থানটলাং শহর ছেড়ে পালিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। সেনাবাহিনীর আংশিক মালিকানাধীন কোম্পানি মাইটেল-এর টাওয়ার বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার দায় স্বীকার করেছে কিছু বিদ্রোহী গ্রুপ। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউজ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে ইন্টারনেট স্বাধীনতা অবনমন হয়েছে ১৪ পয়েন্ট।