ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সড়ক প‌রিবহ‌নে বাড়‌ছে চাঁদাবা‌জি।


সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১ ৮:০৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ সাফিউল আজীম খানঃ

দেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহণে চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বুধবার প্রকাশিত দৈ‌নিক ভো‌রের খবর‌কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বাস কোম্পানি, ব্যক্তি, সংগঠন ও সমিতির নামে টার্মিনাল এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্টপেজ থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা উঠানো হচ্ছে।

জানা গেছে, রাজধানীতে চলাচলকারী গণপরিবহণগুলোর মধ্যে কেবল বাস থেকেই প্রতিদিন অন্তত ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে বরিশাল ও সিলেট বিভাগেও ব্যাপক চাঁদাবাজির সংবাদ পাওয়া গেছে। বস্তুত রাজধানীসহ সারা দেশের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন পরিবহণে চাঁদাবাজি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যা কঠোরভাবে দমন করা উচিত।

২০১৯ সালে হাইওয়ে পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের মহাসড়কগুলো থেকে প্রতিদিন ন্যূনতম ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। এ টাকা আদায় করছে পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক নামধারী ২১৫টি সংগঠন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রভাবশালী নেতারা।

পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ছাড়া মহসড়কের কোনো কোনো স্থানে পৌর কর ও মসজিদ উন্নয়নের নামেও প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। দৈ‌নিক ভো‌রের খবরের প্রতি‌বেদন দেশের সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজির যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না। এ চাঁদাবাজি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কালক্ষেপণ করা উচিত নয়।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এ ধরনের চাঁদা আদায় না করা এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠি দেওয়া হলেও অবস্থার যে কোনো পরিবর্তন হয়নি, যুগান্তরের প্রতিবেদনই এর প্রমাণ।

দেশে অধিকংশ চাঁদাবাজির ঘটনা যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও ক্যাডার বাহিনীর ছত্রছায়ায় ঘটছে, তাই রাজনৈতিক নেতৃত্বের উদ্যোগ ও আন্তরিকতা ছাড়া শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এ অরাজকতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজির সঙ্গে পুলিশের নামও বেশ স্পষ্টভাবেই যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

কাজেই দেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে চাঁদাবাজি থেকে সুরক্ষা প্রদানে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজির কারণে রাস্তায় চলাচলকারী অগণিত যাত্রী প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা। চাঁদাবাজির কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জনস্বার্থ রক্ষায় চাঁদাবাজির মতো অন্যায় ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে রোধ করা প্রয়োজন।

দেশে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও টেন্ডারবাজির জন্য দায়ী মূলত রাজনীতির বর্তমান ধারা। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কারণে কোনো দল ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমর্থিত বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় মারাত্মকভাবে এবং তারা প্রচলিত আইন ও নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো চাঁদাবাজি করে।

পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক নেতা নামধারী ব্যক্তি কিংবা সংগঠন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ যে কেউ চাঁদাবাজির মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকার কঠোর হবে, এটাই প্রত্যাশা।

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার মতামত বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com ❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।