রাজধানীর অদূরে ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় ইদ্রিস কাজীর ৫ম তলা ভবনের ৩য় তলার ২নং রুমে এক যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। এরপর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মূলহোতাসহ ৩জনকে গ্রেফতার করেছেন র্যাব-১ এর একটি বিশেষ দল।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট ২০২১ইং) তারিখে ঢাকার উত্তরা র্যাপিট এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১ এর মিডিয়া সেন্টার থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, গত ২৮ আগস্ট ২০২১ইং ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকার ইদ্রিস কাজীর ৫ম তলা ভবনের ৩য় তলার একটি রুম থেকে এক যুবকের গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। প্রথমে নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি, এরপর র্যাব-১এর বিশেষ একটি দল কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩জনকে গ্রেফতার করার পর এ মামলার আসামীদের কাছ থেকে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করেন র্যাব। র্যাব কর্তৃকসনাক্তকৃত ভিকটিমের নাম জয়নাল (২০)।
উক্ত হত্যার সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃতরা হলো- নাটোরের আব্দুস সুকুর এর ছেলে মোঃ সাব্বির (২২), চাঁন প্রমানিক এর ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেন (২০), মোঃ রায়হান এর ছেলে মোঃ সুরুজ আলী (১৮)। লালমনিরহাট, নাটোর ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব-১ এর বিশেষ একটি দল তাদেরকে গ্রেফতার করেন।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতরা উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং কঙ্কাল প্রায় গলিত মৃতদেহটি জনৈক জয়নালের বলে তারা নিশ্চিত করেছে।
র্যাব জানায়, আশুলিয়ার জামগড়া ইদ্রিস কাজীর ৫ম তলার ৩য় তলায় একটি কক্ষ থেকে গলিত লাশ উদ্ধারের পর র্যাব-১ এর
একটি অভিযানিক দল দ্রততার সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন শুরু করে ও ঘটনাস্থলে বিশ্বস্থ সোর্স নিয়োগ করে এবং পরবর্তীতে সোর্সের মাধ্যমে বর্ণিত বাসায় সচরাচর যাতায়াতকারী একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম ঠিকানা জানতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযানিক বিশেষ দলটি নাটোর জেলার গুরুদাসপুরে অভিযান পরিচালনা করে প্রথমে মোঃ চাঁন প্রমানিকের ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেন (২০) কে গ্রেফতার করে। আরও জানতে পারে যে, একই গ্রামে আনোয়ারের প্রতিবেশী ভিকটিম জয়নালকে গত ১৪আগস্ট ২০২১ইং তারিখ হতে তার বাবা-মা তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলো না। এছাড়া আরও জানতে পারে যে, ভিকটিম জয়নাল তার গ্রামের প্রতিবেশী আব্দুস সুকুরের ছেলে মোঃ সাব্বির হোসেনের সাথে ঢাকার আশুলিয়ায় একই বাসায় সাবলেটে বসবাস করে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, ধৃত আসামী মোঃ সাব্বির হোসেন (২২) এবং সাথী (১৭) পরস্পর স্বামী স্ত্রী।
সাব্বির আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টেসে চাকুরি করার সুবাধে তার স্ত্রী সাথীকে নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় গত ফেব্রয়ারি ২০২১ইং হতে স্থানীয় ইদ্রিস কাজীর ৫ম তলা বাসার ৩য় তলায় ২নং রুমের একটি ফ্ল্যাটে স্বপরিবারে ভাড়ায় বসবাস করত। নিহত ভিকটিম জয়নাল (২০) এবং সাব্বির পরস্পর একই গ্রামের বন্ধু হওয়ায় সে সাব্বিরের ভাড়া বাসায় মে ২০২১ইং হতে সাবলেট হিসেবে বসবাস করতে থাকে। একই বাসায় বসবাস করার ফলে ধৃত আসামী সাব্বিরের স্ত্রীর সাথে জয়নালের সু-সম্পর্ক তৈরি হয়, যা সাব্বির বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হিসেবে সন্দেহ করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। মনোমালিন্যের জের ধরে গত জুন ২০২১ইং মাসে সাব্বির তার স্ত্রী সাথীকে শশুর বাড়ি লালমনিরহাটে পাঠিয়ে দেয়। স্ত্রীকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর সাব্বির জয়নালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যা-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাব্বির জয়নালকে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে পুনরায় তাকে ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। অতঃপর জয়নালকে হত্যার জন্য সাব্বির পরিকল্পিতভাবে তার গ্রামের বন্ধু আনোয়ার এবং সুরুজকে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে গত ১৪ আগস্ট ২০২১ইং তারিখ রাত ১১টার দিকে সাব্বির ভিকটিম জয়নালকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার তার ভাড়া বাসায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আনোয়ার এবং সুরুজের সহায়তায় গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যা করার পর লাশ গুম করার জন্য একটি পানির ড্রামের মধ্যে ভিকটিমের মৃতদেহ রেখে রুমের দরজা বন্ধ করে বাসায় তালা দিয়ে তারা সকলে পালিয়ে যায়।
র্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমেদ জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। আসামীদেরকে আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করা হবে বলে র্যাবের বিশেষ দলের সদস্যরা জানান। সূত্রমতে র্যাব-১ এর বিশেষ এই দলটি অভিযান পরিচালনা করে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন ভয়ংকর অপরাধীদের দ্রততার সাথে গ্রেফতার করার অনেক নজির রয়েছে। উক্ত জয়নাল হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার করায় ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসী র্যাব বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এবং আসামিদের কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।