আমন ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসেলের ক্ষেতে
উড়ানো হয়েছে ঝাণ্ডা। দেখে অবাক হলেও সত্যিটা হলো ক্ষেতের ইঁদুর তাড়াতে এই
পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কৃষকরা। কৃষি
বিভাগের পরামর্শে লাঠির মাথায় পলিথিন বেঁধে বানানো এই ঝাণ্ডা উড়িয়ে উপকৃত
উপজেলার কৃষকেরা। কৃষকেরা জানান, কীটনাশকের চেয়েও বেশি কার্যকরী এই
ঝাণ্ডা উড়ানো। রাণীশংকৈল উপজেলার সর্বত্র বেড়ে উঠছে আমন ক্ষেত। কোথাও
ধানের গাছে থোড় এসেছে, কোথাও শীষ বের হচ্ছে। ফলে কৃষি বিভাগ এবারে
বাম্পার ফলনের আশা করছে। তবে আমন ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দেওয়ায়
কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যা নামার
সঙ্গে সঙ্গেই ইঁদুর আমন ধানের গাছ কেটে সাবাড় করছে। ফলে কৃষকেরা এর
উপদ্রব থেকে ফসলের ক্ষেত বাঁচাতে পলিথিনের ঝাণ্ডা উড়িয়েছেন। উপজেলার
হোসেনগাঁও ইউপির হাটগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ধান খেতে পলিথিন
টাঙানো হয়েছে। কৌতুহলবশত খেতে পলিথিনের এমন ব্যবহার কেন জানতে চাইলে কৃষক
হালিম বলেন, ‘এক বিঘা ধান লাগিয়েছি ধান ভালোই হবে আশা রাখি। কিন্তু হঠাৎ
ধান খেতে ইঁদুরের আক্রমণে অনেক ধানের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছের গোড়া
কেটে দিয়েছে। খেতে অনেক বড় বড় গর্ত তৈরি করছে। দিনের বেলা মানুষের
উপস্থিতির কারণে তারা কম আক্রমণ করে। তবে রাত হলে উপদ্রব বেড়ে যায়। তাই
এই পলিথিনের ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো শব্দ পেলে ইঁদুর স্থান পরিবর্তন
করে। রাতে পলিথিন বাতাসে নড়ে উঠে আর এই বাজনায় ইঁদুর পালিয়ে যায়।’
লেহেম্বা ইউনিয়নের কৃষক আমিনুর রহমান জানান, পলিথিনের এসব ঝাণ্ডার পতপত
শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যায়। উপজেলার নন্দুযার রাতোর বাজেবকসাসহ বিভিন্ন
এলাকাও ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
সূত্রে জানা যায় গত বছরে ২১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। গতবারের
আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এবার উপজেলায় ২১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর
জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। তথ্য মতে, ইঁদুরের বংশ বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি।
সুষ্ঠু পরিবেশে একজোড়া ইঁদুর থেকে বছরে প্রায় তিন হাজার ইঁদুর জন্মলাভ
করতে পারে। জন্মদানের দুইদিনের মধ্যেই এরা পুনরায় গর্ভধারণে সক্ষম হয়।
জন্মদানের তিন মাসের মধ্যে বাচ্চা দিতে সক্ষম হয়। ইঁদুরের জীবনকাল ২-৩
বছর। ইঁদুর ধান, গম, ভুট্টা, বাদাম, ফলমূল বিশেষ করে শাকসবজি, নারিকেল,
পেয়ারা, সফেদা, লিচু, আম, লাউ, মিষ্টি আলু ইত্যাদি কৃষিজ ফসল খেয়ে ক্ষতি
করে। ধান ও গমের শীষ আসার সময় ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে কেটে গর্তের ভেতর নিয়ে
বাসা তৈরি করে এবং খায়। ইঁদুর যতটা না খায় তার চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি নষ্ট
করে।ইঁদুর প্রায় ৩০ ধরনের রোগ ছড়ায়। কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ জানান,
উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে আমনক্ষেতে। কৃষকদের
কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি পলিথিন ঝাণ্ডা উড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। এই
ঝাণ্ডা উড়ানোর ফলে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন বলে জানান তিনি।