ঢাকামঙ্গলবার , ৩১ আগস্ট ২০২১
আজকের সর্বশেষ খবর

মশার নিয়ন্ত্রণ নি‌য়ে প্রশ্ন বাড়‌ছে ডে‌ঙ্গি।


আগস্ট ৩১, ২০২১ ৪:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃসাফিউল আজীম খানঃ

ডেঙ্গি ভাইরাসবাহিত এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে। এর ফলে প্রতিদিন অনেক মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুর হারও। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কীটতত্ত্ববিদরা। তারা বলছেন, এডিস মশার ব্যাপারে পূর্বাভাস দেওয়া হলেও দুই সিটি করপোরেশন তা আমলে নেয়নি। তা ছাড়া এডিস মশার ভয়াবহ রূপ ধারণ করার পর যেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার দরকার ছিল, সেখানে অনেক ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে অবুঝ শিশু ও নিরপরাধ ঢাকাবাসীকে।
কথা হয় কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি সোমবার দৈ‌নিক ভো‌রের খবর‌কে বলেন, এডিসের প্রাদুর্ভাব বাড়লেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধনে সঠিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। রাস্তাঘাটে গান-বাজনা করে সময় পার করছেন তারা। এখন প্রয়োজন নিবিড়ভাবে ফগিং (উড়ন্ত মশা মারা ওষুধ) এবং লার্বিসাইডিং (লার্ভা নিধনে ব্যবহৃত হয়) করে মশা মেরে ফেলা। সে কার্যক্রমে আমরা ঘাটতি লক্ষ করছি। তিনি বলেন, সরকারি হিসাবে ডেঙ্গিবাহিত এডিস মশায় আক্রান্তের সংখ্যা বলা হচ্ছে ১০ হাজার ৯০ জন। এটা কেবল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪১টি হাসপাতালের তথ্য। এর বাইরেও অনেক রোগী রয়েছে। যাদের হিসাব সরকারি তথ্যে আসছে না। তিনি বলেন, সরকারি হিসাবে একজন রোগীর বিপরীতে বাস্তব রোগীর সংখ্যা ২০ জন। সে হিসাবে বর্তমানে অন্তত দুই লাখ লোক ডেঙ্গি আক্রান্ত। আর এ মৌসুমে এটা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছি। তিনি বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে। ঢাকার দুই সিটিতে ত্বরিত গতিতে টেকসই মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। যখন যে কাজ করা দরকার তারা সেটা করেন না। এভাবে একটি বাসযোগ্য ও নিরাপদ নগর গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ বছর ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত ১০ হাজার ৯০ জনের মধ্যে বেশির ভাগই ঢাকায়। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এক হাজার ১৫০ জনের বেশি। এর মধ্যে শুধু ঢাকায়ই ভর্তি আছেন এক হাজার চারজন। সবশেষ গতকালও ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৩৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যাই ২১৩ জন। বাকি ২০ জন ঢাকার বাইরে আক্রান্ত। ডেঙ্গিতে মারা গেছেন ৪২ জন। এর মধ্যে জুলাইয়ে ১২ জন এবং আগস্টে ৩০ জন মারা গেছেন। গত জানুয়ারিতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯, মার্চে ১৩, এপ্রিলে ৩, মে’তে ৪৩, জুনে ২৭২ জন, জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬ এবং আগস্টে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে সাত হাজার ৪৩২ জনে দাঁড়িয়েছে।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গি ভাইরাসবাহিত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দুই সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ডিএনসিসি এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে। আমরা শূন্যে নামানোর লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা ধরে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর বাসা এবং আশপাশের এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় কিছু ভুলত্রুটি পাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা ডেঙ্গি ভাইরাসবাহিত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতি লাভ করবে।
কথা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গিরোগী বৃদ্ধির মূল কারণ মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ব্যর্থতা। যখন যে কাজ করা দরকার দুই সিটি তখন সে কাজ করছে না। বর্তমানে মূল কাজের চেয়ে লোক দেখানো কাজ বেশি হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটির মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য অভিজ্ঞ জনবলের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সে দুর্বলতা নিরসনে অভিজ্ঞ জনবলের সমন্বয়ে ‘সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা’ গড়ে তোলা দরকার। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগ রয়েছে। তবে সেটা দীর্ঘসময় লেগে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, সানারপাড় এলাকায় এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বেশি। ওই এলাকার মশক নিয়ন্ত্রণে যে ধরনের ব্যবস্থাপনা দরকার ছিল, কর্তৃপক্ষ সেটা করছে না। এজন্য ওই এলাকার মানুষকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
বিপুল অর্থ ব্যয়েও মিলছে না ফল : মশক নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বিপুল অর্থ খরচ করছে। কিন্তু, সে অনুযায়ী সেবা মিলছে না। এ কারণে নগরবাসীর প্রশ্ন-তাহলে জনগণের এত অর্থ এ খাতে কোন কাজে খরচ করা হচ্ছে? ঢাকার দুই সিটি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা হয়েছে ৯৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর পরও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ ছিল নগরবাসী। কিউলেক্স মশার মৌসুমে ভয়াবহ উপদ্রবে নাকাল হয়েছে মানুষ। এখন এডিসবাহিত ভাইরাস ডেঙ্গির মৌসুমও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে মশা। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ খাতে দুই সিটিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১০ কোটি টাকা।

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার মতামত বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com ❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।