দেশে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। করোনা আগ্রাসী রূপ নিয়েছে। হাসপাতালগুলো রোগীতে টইটুম্বুর। প্রতিদিন ব্যাপক হারে সংক্রমণ বাড়ছে এবং গ্রাম অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোর সিট ও আইসিইউ খালি নেই। সরকারের ভাষ্যমতে বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। পৃথিবীর কোথাও কোথাও তৃতীয় চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ঐ পর্যায়ে গেলে আমাদের দেশের অবস্থা কি হবে আল্লাহই ভাল জানেন। যে সমস্ত দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে তারা তাদের দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের টিকার অবস্থা হযবরল।
টিকা আবিষ্কারের শুরুর দিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদেরকে টিকা দিতে চেয়েছিল। কোন কোন দেশ আমাদের সাথে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনও করতে চেয়েছে। কিন্তু সরকার ভারতকে খুশি করার জন্য অন্যদের প্রস্তাবকে পাত্তা না দিয়ে ভারতের সাথে একক ভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়। ভারত আমাদের থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েও চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ভারত নাখোশ হবে এই চিন্তায় সরকার উচ্চবাচ্যও করছে না। আমরা ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার। প্রয়োজনের সময় চুক্তি ভঙ্গ করে ভারত চাউল, পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রেখে আমাদেরকে সংকটে ফেলে। আমাদের সরকার সেগুলো কোন কথাই বলেনা। ভ্যাকসিনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার ভারতের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হওয়া মারাত্মক ভুল ছিল। বর্তমানে মুহূর্তে দাম প্রকাশ না করার শর্তে চায়না আমাদেরকে কম মূল্যে টিকা সরবরাহ করতে চেয়েছিল। কিন্তু কী আশ্চর্য বিষয় বাংলাদেশের সরকারের একজন সচিব সেই শর্ত ভঙ্গ করে দাম প্রকাশ করে দিলেন। যে কারণে চায়না এখনো বাংলাদেশে কি টিকা দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়নি। জনগণের জিজ্ঞাসা তিনি কার স্বার্থে দাম প্রকাশ করলেন? দেশের এত বড় ক্ষতি করার অধিকারতো কারও নেই। সরকার কি আদৌ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন?
দেশের আঠারো কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত বারো কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হলে চব্বিশ কোটি টিকা দরকার। কোন কোন গবেষণায় বলছে এখন যে টিকা দেওয়া হচ্ছে ১/২ বছর পর এর কার্যকারিতা থাকবে না। প্রতিবছর টিকা দিতে হবে। তাহলেতো চাহিদা আরো বাড়বে। বর্তমান ব্যবস্থায় কত বছরের এই টিকার সংগ্রহ হবে সরকার কি তা বলতে পারবে?
করোনা নিয়ন্ত্রণের নামে লকডাউন, শার্টডাউন বা কারফিউ দিয়ে কতদিন জনগণকে ঘরে আটকে রাখবে? টিকা নামিয়ে জনগণকে ঘরে আটকে রাখলে কি সমস্যার সমাধান হবে? আর কতদিন রাখবেন? দ্রুত পরিস্থিতি উত্তরণের চিন্তা থেকে দেশের টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে আমাদের বঙ্গভেক্স এর দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করুন, উৎপাদনের অনুমতি দিন। তাতে দেশ বাঁচবে, দেশের মানুষ বাঁচবে এবং বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় হবে। যেখানে বাঁচা-মরার প্রশ্ন সেখানে ভারতের সাথে "বড়ভাই ছোটভাই" "স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক" বলে ঘৃণ্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র জনগণ আর দেখতে চায় না।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষ ও স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। গত দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাক্রম ব্যহত হচ্ছে। দীর্ঘবিরতির কারণে কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষা বিমুখ হয়ে পড়ছে, অনেকেই অকালে ঝরে যাবে।পরবর্তীতে এরা অনেকেই অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়বে। শিশু শ্রেণি থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বয়স জনিত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনেকেরই চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। সর্বত্রই লেজেগোবরে অবস্থা।
বর্তমান অবস্থায় দেশের ৬০/৬৫ ভাগ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। যাদের আয়-রোজগারের কোন ব্যবস্থা নেই তারা বাজবে কিভাবে? বেঁচে থাকার জন্য মানুষের খাদ্য গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। করোনা একটি ভয়াবহ ব্যাধি জেনেও মানুষ জীবিকার তাগিদে রাস্তায় নামছে, লকডাউন, শার্টডাউন কোন কিছুই মানছে না। পেটে ভাত না থাকলে মানুষ কারফিউও ভঙ্গ করবে। আইন মানুষের প্রয়োজনে, আইনের প্রয়োজনে মানুষ নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার ও বিভিন্ন সেবা সংস্থা খাদ্যদ্রব্য সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। আর বাংলাদেশে তার বিপরীত চিত্র। সরকারের কার্যক্রম অনেকটাই লোক দেখানো।
করোনার প্রথম ধাপে লকডাউনে সরকার যতটুকু করেছে তার চাইতে বেশি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিবর্গ। বিএনপি একাই প্রায় দুই কোটি পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিয়েছে। এবার রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সামর্থ্যবানরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে আগের পর্যায়ে দিতে পারছেন না। তারপরও বিএনপি তাঁদের প্রতিটি কার্যালয়ে করোনা সেবা কেন্দ্র চালু করেছে। সেবা কেন্দ্রগুলিতে করোনা রোগীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ জরুরী চিকিৎসা সামগ্রী সংরক্ষন করছেন। করোনা রোগীদের প্রয়োজনে বিএনপির নেতাকর্মীরা এসব সামগ্রী বিনামূল্যে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেবে। সার্বভৌমত্ব রক্ষা পরিষদ-সরপ সহ কিছু সেবামূলক সংগঠন সারাদেশের ক্ষুধার্ত ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। সরকারের দায়িত্ব তার দেশের নাগরিকদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা।
লোক দেখানো নয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তত পাঁচ কোটি পরিবার কে খাদ্য ও নগদ অর্থ সাহায্য করা জরুরী প্রয়োজন। সরকার সেদিকে মনোযোগী না হয় রাজনৈতিক খেলায় ব্যস্ত। এই সংকটকালীন মুহূর্তে দেশের নাগরিকদেরকে রক্ষার্থে বিএনপি ঘোষিত ৫ দফা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করুন। জেল-জরিমানার ভয় দেখিয়ে মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখার চিন্তা না করে সমাধানের পথে হাটো। (সংরক্ষিত)
লেখক- ওমর ফারুক পাটোয়ারী
যুগ্ম আহ্বায়ক
জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল কেন্দ্রীয় কমিটি।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭