সম্রাট। চঞ্চলতায় ভরা চলাফেরা। বয়স মাত্র পাঁচ বছর। কিন্তু ১২ দিন যাবৎ অসহ্য ব্যথা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। সম্রাটের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাবা-মাসহ পাঁচজন।
সম্রাট ভর্তি হওয়ার পর থেকেই করোনায় বন্ধ স্কুল। বাবা-মা, চাচা-চাচীর সঙ্গে থাকে গাজীপুরে। তারা সকলেই পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বাড়িতে একা সম্রাট খেলতে গিয়ে বাথরুমে পড়ে যায়।
প্রচণ্ড ব্যথা পায় পেটে। কিন্তু বাবা-মাকে ভয়ে বলেনি। ব্যথা নিয়েই কেটে যায় দুইদিন। তাদের বাড়ি বগুড়া জেলায়। বাবা-মাকে আঘাতের কথা না জানিয়েই চলে যায় বগুড়ায়। সেখানে হঠাৎ রক্ত বমি করে সম্রাট।
নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। এরপর সেখান থেকে নেয়া হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরীক্ষা করার পর জানতে পারেন কিডনিতে ব্যথা পেয়েছে সম্রাট। জমাট বেঁধেছে রক্ত।
চিকিৎসকের পরামর্শ মতো উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হয় রাজধানীর শিশু হাসপাতালে। সেখান থেকে সর্বশেষ সম্রাটের চিকিৎসার জন্য আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সম্রাটের চাচা রশিদ বলেন, ডাক্তাররা সম্রাটের রিপোর্ট মেলাক্ষণ ধরে দেখলো। তারা বললো- অপারেশন করা নাও লাগতে পারে।
সম্রাটের পেছনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা এসেছে বন্ধকে নেয়া জমি ফিরিয়ে দিয়ে। এরপরের চিকিৎসা কীভাবে চলবে এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবারটি। রশিদ বলেন, আমার গ্রামের মানুষজনের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চাইছি। দেখা যাক- কী হয়। না হলে দুই ভাইয়ে গ্রামে আড়াই শতক করে পাঁচ শতক জমি পাইছি- ওটা ব্যাচা দেয়া লাগবে।
সম্রাটের সঙ্গে সেই শুরু থেকে আছেন বাবা ও তার চাচা রশিদ। সম্রাটের বাবা বাবু বলেন, আমার একটাই বাচ্চা, অসুস্থ। এরই মধ্যে চাকরি নিয়াও চিন্তা করা লাগছে। চাকরি যায় যায় অবস্থা। শনিবারের মধ্যে চাকরিতে ফিরতে বলছে। এখন এই লকডাউনের মধ্যে ক্যামনে যাই।
তিনি আরও বলেন, এখানেও শান্তিমতো চিকিৎসা করাবো তারও উপায় নাই। ওয়ার্ডের এক দালাল দেখলেই টাকা চায়। কয়, ২০০ টাকা দেয়া লাগবো। নইলে ঢুকতে দেয়া যাইবো না। পালায় বেড়াইতেছি আসার পর থেকেই। আমারে কয় টাকা না দিলে পুলিশে ধইরা নিয়া যাইবো।
সম্রাটকে নিয়ে চলছে লড়াই। এরই মধ্যে লকডাউনের কারণেও লড়তে হচ্ছে তাদের। সম্রাটের সঙ্গে এসেছেন পাঁচজন। বাবা, মা, চাচা, মামা, মামী। রশিদ বলেন, পাঁচজনের খাবারের পেছনে প্রতিদিন হাজার টাকা খরচ হয়। এখন ঢাকায় এতগুলো লোক এসে বিপদেই পড়ে গেছি। এখন চাইলেও ওর মামা-মামি বাড়িতে যাইতে পারতেছে না। আর এত মানুষ থাকায় খরচও বাড়তেছে। সম্রাটের পেছনে প্রতিদিন দুই, আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। আবার এতগুলা মানুষের খাওয়া- খুব বিপদে আছি ভাই।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭