ঢাকারবিবার , ১১ জুলাই ২০২১

মেসির অমরত্বের দিন, নায়ক ‘ব্রাহ্মণ মারিয়া’, নেইমারের কান্না


জুলাই ১১, ২০২১ ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

রিকশাচালকদের জন্য এমনিতে সময়টা ভালো। কঠোর লকডাউনে তারা পুরাই মুক্ত। মুক্তবাজার অর্থনীতির সূত্র মেনে ভাড়াও হাঁকছেন বেশি। তারপরও শেওড়াপাড়ায় বিষণ্ন এক রিকশা চালকের কণ্ঠ শোনা গেলো। আজ বের হতে দেরি হয়ে গেছে? কেন? খেলা দেখছিলাম। তুমি কোন দলের সাপোর্টার? ব্রাজিল।
ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্টেডিয়াম মারাকানায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মাঠে নামার আগে প্রায় পনের হাজার কিলোমিটার দূরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয় এই বাংলাদেশে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া যথারীতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও শিরোনাম হয়েছে। সেখানে জারি করা হয় বিশেষ সতর্কতা।

মাইকিং করে পুলিশ। কিন্তু তার বাইরেও লাখ লাখ ফুটবলপ্রেমী আজ নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে পারেননি। ভোর ছয়টার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। ঠিকমতো জাগতে পারবো তো? অ্যালার্ম বাজবে তো? কতজনের মনে কতো চিন্তা। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মনে সম্ভবত এতো উদ্বেগ ছিলো না। তারা ছিলেন প্রার্থনায়। ২৮ বছরে কত নদীর জল কত দিকে গড়িয়েছে। কোটি কোটি আর্জেন্টিনার সমর্থকতো এই দীর্ঘ সময়ে প্রিয় দলকে একটি শিরোপাও জিততে দেখেননি। তার চেয়ে বড় কতগুলো ফাইনাল হারের যন্ত্রণা বুকে চেপে ছিলেন তারা। প্রার্থনা ছিল তাদের প্রিয় লিওনেল মেসির জন্যও। এক সাক্ষাৎকারে ফুটবলের এই ছোট জাদুকর বলেছিলেন, ছোট বেলা থেকেই হার মেনে নিতে পারতেন না তিনি। সেটা আর্জেন্টিনার রাস্তা কিংবা বার্সেলোনার ক্যাম্প যেখানেই হোক না কেন। সেই মেসি’র এতোগুলো ফাইনাল হারের দাগ! এই মারাকানাতেই সাত বছর আগে বিশ্বকাপ ফাইনাল তাকে কাঁদিয়েছিলো।
আরেকটি ফাইনাল। অবশেষে যেন অভিশাপ কেটে গেলো। এটাও কি নিয়তি লিখে রেখেছিল? না হয় এমনিতে পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা লিওনেল মেসি আজ ছিলেন অনেকটাই নিজের ছায়া হয়ে। খেলার শেষ মুহূর্তে যে গোল মিস করলেন তাও অবিশ্বাস্য। এ জায়গা থেকে কত গোলই না করেছেন তিনি! কিন্তু মহাকাল তার আজকের এই ব্যর্থতা মনে রাখবে না! কারণ যে চিত্রনাট্যের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করা হয়েছে সেদিন যে অবশেষে দেখা গেল। ফাইনাল শেষ। লিওনেল মেসির চোখে আনন্দাশ্রু। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা একে একে দৌড়ে যাচ্ছেন তার দিকে। আবেগাপ্লুত মেসি কাপে গভীর মমতায় চুমু খেলেন। মেসি যখন জড়িয়ে ধরলেন কোচ স্কালোনির চোখেও পানি দেখা গেল! যিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, কাপ না জিতলেও মেসি সর্বকালের সেরা।
মেসির অমরত্বের এই দিনে নায়ক অবশ্যই ডি মারিয়া। ভাগ্য তাকেও কম ভোগায়নি। তবে অবশেষে পাওয়ার দিনটিও এলো। এ যেন নিয়তির নিয়ম। যা কেড়ে নেয়, তা একদিন ফেরত দেয়ও! রদ্রিগো দি পলের পাসটি কি অসাধারণ দক্ষতায় আয়ত্বে নিলেন। তারপর চোখ জুড়ানো সে গোল। বলছিলাম, আজ ভোরেই জেগে ওঠেছিল বাংলাদেশ। খেলা দেখার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে নানা স্ট্যাটাস আর মন্তব্য করছিলেন হাজার হাজার মানুষ। এরইমধ্যে এএফপি’র ব্যুরো চিফ শফিকুল আলমের একটি স্ট্যাটাস নজরে এলো, ব্রাহ্মণ-মারিয়া।
ফাইনাল খেলাটিকে অবশ্য ঠিক ছন্দময় বলা যাবে না। এমন বিগ ম্যাচে যেটা হয়। কেউই হারতে চায় না। ফাউলের প্রবণতাও ছিল। তবুও ল্যাটিন ফুটবলের চিরকালীন সৌন্দর্য দেখা গেছে মাঝে-মধ্যেই। গোল মিসের আগে কি অসাধারণ গতি আর পায়ের কারুকাজে ব্রাজিলের বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। নেইমারের অনবদ্য ড্রিবলিংও দেখা গেছে বেশ কয়েকবার। তবে গোল পোস্টে আজও অসাধারণ ছিলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্টিনেজ।
ফুটবল কখনো কখনো জীবনের মতোই কঠিন! বলছিলাম, সাত বছর আগে মারাকানা কাঁদিয়েছিল লিওনেল মেসিকে। মারিও গোটজের অসাধারণ একটি গোল আর্জেন্টিনার স্বপ্ন ভেঙে দেয়। যন্ত্রণায় যে কেঁদেছেন বাংলাদেশেও কত তরুণও। কাল ডি মারিয়ার অসাধারণ একটি মুহূর্ত নির্ধারণ করে দেয় ফাইনালের ভাগ্য। ম্যাচ শেষের বাশি বাঁজতে এবার কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেলো নেইমারকে। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলেও ফাইনাল জিততে না পারার যন্ত্রণা যেন তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। কোন সান্তনাই থামাতে পারছিল না তার কান্না। একপর্যায়ে প্রিয় বন্ধু মেসি এগিয়ে গেলেন। গভীর মমতায় বুকে টেনে নিলেন নেইমারকে। সবকিছু ছাপিয়ে ফাইনালে এটাই যেন সবচেয়ে বড় ছবি হয়ে রইলো। বন্ধুত্ব ফুটবলের চেয়েও বড়।

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ  বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com ❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।