ছিনতাই হওয়া পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের ফোনের হদিস মিলছে না। কাফরুল ও তেজগাঁও থানার পুলিশেরা গত কয়েকদিন হন্যে হয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পুলিশের ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টা তাদের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরদপ্তর থেকে ফোন উদ্ধার হয়েছে কি না প্রতিদিন নিয়মিত খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
ওদিকে মন্ত্রী এমএ মান্নানের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। মন্ত্রীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী এমন ব্যক্তি জানান, স্যার এ নিয়ে হতাশ। ফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নানা রকম বার্তা রয়েছে। প্রকাশ্যে এভাবে ফোন ছিনতাই হওয়ার পরেও কেন উদ্ধার হচ্ছে না তা নিয়ে মূলত স্যারের হতাশা। এদিকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রী মহোদয়ের ফোন ছিনতাই করার ৫ মিনিটের মধ্যে সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়। যে আইফোনটি ছিনতাই হয়েছে সেটার লক বাংলাদেশে খোলা সম্ভব নয়। ওই ফোনের লক খুলতে হলে প্রতিবেশী ভারতে পাঠাতে হবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফোন ছিনতাইকারীদের শক্তিশালী একটি চক্র রয়েছে রাজধানীজুড়ে। তারা একেক ব্র্যান্ডের ফোন ছিনতাই করে একেক সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করে। স্যামস্যাং, সিমফনি, শাওমি, ভিভোসহ বেশকিছু ব্র্যান্ডের ফোন কেনার জন্য একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। ওই সিন্ডিকেট আবার এলাকাভিত্তিক কাজ করে। অন্যদিকে আইফোন নেয়ার জন্য আলাদা সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা একটু উঁচু মানের সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিত। ছিনতাইকারীরা এ ধরনের ফোনের বিনিময়ে তুলনামূলক বেশি অংকের টাকা পায়। আইফোন পাওয়ার পর ওই সিন্ডিকেট ভারতে পাচার করে দেয়। সেখানে কান্ট্রি লক খোলার পর ব্যবহার করতে থাকে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা গত কয়েক দিন টানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফোনের হদিস করতে পারেনি। ফোনটি যদি এরইমধ্যে ভারতে চলে যায় তাহলে তা উদ্ধার করা সম্ভব নয়। কারণ কান্ট্রি লক খোলার পর সেখানে ভারতীয় মোবাইল কোম্পানির সিম ব্যবহার করা হবে। যেহেতু ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ রয়েছে সেহেতু ফোনটি এখনও দেশে রয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস। ফোনটি বন্ধ থাকায় ট্র্যাক করারও কোনো ধরনের সুযোগ নেই। তাই ছিনতাইকারি ও চোর চক্রকে ধরে তাদের কাছ থেকে ফোনের তথ্য আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর বিজয় সরণি, তেজগাঁও, চন্দ্রিমা উদ্যান, কাফরুল এলাকার প্রায় ডজনখানেক চিহ্নিত ছিনতাইকারীকে ধরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। স্থানীয় ছিনতাইকারী ও ছিঁচকে চোরের কেউ বলতে পারছে না মোবাইলের বিষয়টি। তাদের দাবি, তাদের কেউ ছিনতাই করেননি ফোনটি। তাদের নেটওয়ার্কেও পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোন ছিনতাইয়ের তথ্য নেই। সবমিলিয়ে ফোনটি উদ্ধারে ঘাম ঝরাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। আশপাশের এলাকার ক্যামেরাগুলো থেকে ছিনতাইয়ের সময়ের ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অস্বাভাবিক কিছুই পায়নি পুলিশ।
কাফরুল থানা পুলিশ জানায়, ইতিমধ্যে চন্দ্রিমা উদ্যানের ভেতরের টোকাই, শেরেবাংলা মাঠ সংলগ্ন এলাকার টোকাই, আগারগাঁওসহ আশপাশের এলাকার স্থানীয় এবং সন্দেহভাজনদের থানায় আনা হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মোবাইলের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় কাফরুল থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিএম ফরিদুল আলম। গত রোববার (৩০শে মে) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বের হয়ে বিজয় সরণির সিগন্যালে জ্যামে আটকা পড়ে পরিকল্পনামন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ি। তখন গাড়ির গ্লাস খুলে মোবাইলে কথা বলছিলেন মন্ত্রী। এ সময় হঠাৎ এক ছিনতাইকারী ছোঁ মেরে মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়। এ ঘটনার পরপরই পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের ব্যক্তিগত সহকারী কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।