ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে সতর্ক করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘যে আগুন নিয়ে খেলছেন, সেই আগুনে নিজেরা পুড়ে মরার আগে সাধারণ জনগণের কথা ভাবুন।’
শনিবার (২৬ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী রিকশা-ভ্যান শ্রমিক দলের উদ্যোগে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধের প্রতিবাদে ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের উদ্দেশ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এখনও সময় আছে, শুধু নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করবেন না। ঘরে আগুন লাগলে পীর সাহেবের ঘরও কিন্তু আগুন থেকে বাদ যায় না। পাপীদের ঘরও আগুন থেকে বাদ যায় না। আপনারা বাদ যাবেন এই কথাটা ভাববেন না। যে আগুন নিয়ে খেলছেন, সেই আগুনে নিজেরা পুড়ে মরার আগে সাধারণ জনগণের কথা ভাবেন। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন এবং অটোরিকশা শ্রমিকদের বাঁচার স্বার্থে এগুলো চলতে দিন। তাদেরকে পুনর্বাসন করার পরে এগুলো বন্ধ করার চিন্তা করুন।’
বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, ‘যারা ডিজিটাল ডিজিটাল করেন, দেশকে ডিজিটাল করেছেন তথ্যটা আসলে ঠিক নয়। ডিজিটাল সার্ভের ওপরে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সংস্থা এইম বিজনেস ইন্ডেক্স একটি জরিপ চালিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে পিছনে পড়া দেশ। বাংলাদেশের নিচে আছে শুধু আফগানিস্তান। নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান যারা আছে প্রত্যেকেই আমাদের ওপরে। সুতরাং এ সরকার ডিজিটাল সরকারও না, শ্রমিক-গরিব বান্ধব সরকারও না। বরং এই সরকার হচ্ছে দুর্নীতিবান্ধব সরকার। আমার প্রশ্ন, যদি এই সরকার শ্রমিকবান্ধব সরকার হতো এই যে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, পদ্মা সেতুর প্রকল্প, শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে, এখানে যে লক্ষ কোটি টাকা দুর্নীতি হচ্ছে সেই টাকা কি শ্রমিকরা ভাগ পাচ্ছে? কোনক্রমেই পাচ্ছে না। বরং তারা তাদের ন্যায্য পাওনাটাও অনেক সময় দেরিতে পায়।’
বাজেট প্রসঙ্গে যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘অনেকেই ব্যবসা-বান্ধব বাজেটের কথা বলেন। এটা ব্যবসা-বান্ধব বাজেটও না। এটা গোষ্ঠীবান্ধব বাজেট। যারা আওয়ামী লীগ করে, আওয়ামী লীগকে ডোনেশন দেয় সেই সমস্ত ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য যা যা করা দরকার তাই করছে সরকার। আর অন্য ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে অসহায় হয়ে যাচ্ছে।’
লকডাউন নিয়ে মানুষ ‘হাসাহাসি করে’ মন্তব্য করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে আমাদের যারা আত্মীয়-স্বজন আছে তারা যখন ফোনকল করে তখন দেশের এই লকডাউনের কথা শুনে হাসাহাসি করে। তারা বলে- কখনো লকডাউন, কখনো শাটডাউন, কখনো কঠোর লকডাউন, এরপর দেবে ‘নেত্রীর কসম লকডাউন’, কোনও লকডাউন কাজ করছে না। লকডাউন থেকে এখন গেছে কঠোর শাটডাউনে। কঠোর শাটডাউন কবে আবার হবে ‘আল্লাহর কসম শাটডাউন’। এগুলো ঘোষণা পর্যন্তই শেষ। এতকিছুর মধ্যেও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান গত পরশুদিন ফরিদপুরে খোলা মাঠে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে আওয়ামী লীগের সভা করেছে। সেখানে কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। এজন্য বলা হয় এ সরকার দুর্নীতিবান্ধব সরকার।’
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এ সরকার দুর্নীতিবান্ধব সরকার, শ্রমিকদের বিরোধী সরকার। এদের কাছে দেশ নিরাপদ না বলেই দেশবাসী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আশা করে। তাঁর (খালেদা জিয়া) সরকারের হাতে এ দেশ নিরাপদ। এজন্য বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সব জায়গায় এসে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পান্ডাদের কাছে প্রশ্ন রেখে যাই, যারা এই অটোরিকশা আমদানি করেছে এরা তো আপনাদের লোক। তাদের লাভ হয়ে গেছে, তাদের টাকা উঠানো হয়ে গেছে। এখন যাদের কাছে এগুলো দিয়েছেন তাদেরকে তো রাস্তায় ফেলে পিসে মারতে পারেন না। এই অটোরিকশা-ভ্যান বন্ধ করার আগে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সম্পন্ন করে তারপরে এগুলো বন্ধ করেন। তা না হলে পেটের ক্ষুধা কিন্তু কোনও আইন মানে না। পেটের ক্ষুধা আইনের কোনও বেড়াজাল মানে না। এটা কিন্তু একসময় বিক্ষোভে পরিণত হয়।’
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স, শ্রমিক দলের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসাইন ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।