গৃহযুদ্ধের ক্ষত, উন্নয়ন প্রকল্পে সীমাতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণসহ নানা কারণে অর্থনৈতিকভাবে জর্জরিত প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ২০ কোটি ডলার ধার চেয়েছে। মুদ্রা বিনিময়ের (কারেন্সি সোয়াপ) আওতায় শ্রীলঙ্কাকে সহায়তায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারকটির খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রীলঙ্কা সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা চাওয়া হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক শ্রীলঙ্কাকে ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাংলাদেশ সরকার চাইলে এই টাকা দেয়া যেতে পারে।
বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নে (ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ) চাহিদার তুলনায় ঘাটতিতে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির জিডিপি প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নেমে এসেছে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে, যা জিডিপি’র ৪.৭৬ শতাংশ।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ ধারের জন্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে লাইবরের (লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদের হার) সঙ্গে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ যুক্ত করে এই অর্থ শ্রীলংকাকে তিন মাসের জন্য দেয়া হবে। যা শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করবে। যে সব দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ কম তারা বিপদে পড়লে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
সিরাজুল বলেন, শ্রীলঙ্কা যদি বাংলাদেশ থেকে ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার নিতে চায় তার সমপরিমাণ শ্রীলঙ্কান রুপি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। সমস্ত ধরনের নিয়ম কানুন শেষে শ্রীলঙ্কাকে এই টাকা দেয়া হবে। এর জন্য শ্রীলঙ্কার সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি থাকবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এভাবে ডলার দিতে যাচ্ছে। যে পরিমাণ ডলার বাংলাদেশ দেবে সেটা রিজার্ভ থেকে কমে যাবে। এতে বাংলাদেশের সুনাম হবে। তবে কোনো কোনো সময় এ ধরনের টাকা ফেরত পেতে সমস্যা হয়, তখন একটু অসুবিধা হয়। তবে কারেন্সি সোয়াপ বা আন্তঃদেশীয় মুদ্রা বিনিময় অনেকটা ‘ব্যাংক টু ব্যাংক লেন্ডিং’ এর মতো হওয়া ঝুঁকি কম থাকে। যেমন; শ্রীলঙ্কা যদি এই টাকা দিতে না পারে তখন বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে যে বৈদেশিক বাণিজ্য হয়, সেখানে দেনাপাওনা থেকে এই টাকা সমন্বয় করে নেয়া হবে। এতে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনার পাশাপাশি কান্ট্রি রেটিংয়েও সুবিধা দেবে। তখন বাংলাদেশের রেটিং বেড়ে যাবে আবার শ্রীলঙ্কা রেটিং কমে যাবে।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। রিজার্ভের এ অর্থ থেকে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার ধার দেয়া হবে।