দ্বিতীয় ধাপে লকডাউনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সোমবার ভোর রাত থেকে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেশি থাকলেও সকাল থেকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে লকডাউনে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ বাড়তে থাকে ঘাট এলাকায়।
তবে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যবিধি অপেক্ষা করে পদ্মা পাড়ি দিতে ফেরিগুলোতে দেখা গেছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এছাড়াও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক যাত্রী ট্রলারযোগে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন।
বরিশালের যাত্রী সোলেমান বেপারী জানান, এক সপ্তাহের জন্য কঠিন লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার। ঢাকা শহরে থেকে আয় তো করতেই পারবো না, ব্যয় করতে হবে। কোথায় থেকে ব্যয় করব। বাড়িতে গিয়ে না খেয়ে থাকলেও ভালো তাই পরিবারের সকলকে নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি।
ঝালকাঠির যাত্রীর তারা পুরো পরিবারকে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সময় নেই। বাড়িতে যেতে হবে। তাই ফেরীতে ঠেলাঠেলি করে উঠছি। বাড়িতে গিয়ে উঠতে পারলে আল্লাহ চালাবেন। ঢাকায় বসে থাকলেতে না খেয়ে থাকতে হবে। টাকা খরচও তিনগুণ হচ্ছে সামাজিক দূরত্বেরও কোনো বালাই নেই। মাওয়া ঘাটে ঈদে ঘরমুখো মানুষের মতো ভিড় লেগে আছে।
সোলেমান ব্যাপারী বলেন, লকডাউনের আশঙ্কায় বেশিরভাগ যাত্রী বাড়ি ফিরছেন। ফলে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ফেরিগুলোতে যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অপরদিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচে অসহনীয় যানজটে জনদুর্ভোগ মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে। রোববার থেকে অসহনীয় জ্যাম শুরু হয়েছে। একইভাবে চলছে।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচে প্রতিদিন অসহনীয় জ্যাম লেগে আছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই স্থানের জ্যামে নাকাল হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পর থেকে শ্রীনগর, সিরাজদিখান ও লৌহজং উপজেলা থেকে শ্রীনগর বাজার এবং বিভিন্ন দপ্তরে এই পথে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে চলাচলের প্রধান পথ হওয়ায়, অটোরিক্সা, বাস, পিকআপ, ট্রাকসহ আটটি রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহন চতুর্মুখী যাতায়াত করে। এ কারণে প্রয়োজনের তুলনায় সরু পথ দিয়ে কে কার আগে যাবে এমন প্রতিযোগীতা করতে গিয়েই জ্যামের শুরু হয়। পরে সময়ের সাথে সাথে তা দীর্ঘ হতে থাকে।
সোমবার বেলা ১২টার সময় সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফ্লাইওভারের নিচের জ্যাম একপ্রেসওয়ের দু'পাশের সার্ভিস লেনে ও শ্রীনগর-মুন্সীগঞ্জ সড়কের দুই পাশে পাঁচ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে। শ্রীনগর থানা পুলিশ শত চেষ্টা করেও জ্যামের জট খুলতে পারছে না। যাত্রীরা কেউ কেউ অর্ধকিলোমিটার ঘুরে ঝুঁকি নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের বেড়া ডিঙ্গিয়ে রাস্তা পার হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে।
বেশ কয়েক দিন ধরে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের সময়সীমা সীমিত করার পর থেকে এই জ্যাম প্রকট আকাড় ধারণ করেছে।
সিএনজিচালক তরিকুল বলেন, উমপাড়া থেকে ৮০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী নিয়েছেন আরধীপাড়া টেক্কামার্কেট যাবেন বলে। এখানে এসে আটকে আছেন দুই ঘন্টা ধরে। যাত্রী ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে নেমে গেছেন। প্রতিদিন আমার মত অনেক অটোচালককেই এমন পরিস্থিতিতে পরতে হচ্ছে। এই জ্যামের কারনে আয় নেমে এসেছে অর্ধেকে। কিন্তু প্রতিটি অটোর জন্য মালিককে দিতে হয় দিন প্রতি তিন শ' টাকা। জমা দিয়ে নিজের হাত খরচের পর পরিবারের জন্য তেমন কিছু থাকে না।
ওই পথে চলালচকারী শ্রীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আরিফুল ইসলাম শ্যামল বলেন, রাস্তাটি নির্মাণের সময় এই রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রীর চাপ নিয়ে ভাবা উচিৎ ছিল। জ্যামের এই স্থান থেকেই সামান্য দূরে রেল ব্রিজের কাজ হচ্ছে। ভালোভাবে বিকল্প রাস্তা তৈরি না করেই অবিবেচকের মতো মাটি দিয়ে উচু নিচু রাস্তা তৈরি করে চালিয়ে দিচ্ছে। অনেক দিন ধরেই যানবাহন চলাচল করার সময় মনে হয় ধুলি ঝড় হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ রেল সেতুর নিচে বিকল্প রাস্তা ও এক্সপ্রেসওয়ের ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় নজর না দেয়ার এই অঞ্চলের বহু মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, মাওয়া ঘাটে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। কোনোভাবেই চাপ সামলানো যাচ্ছে না। কোনো স্বাস্থ্যবিধি তারা মানছে না। ফেরিতে গাদাগাদি করেই পারাপার হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের সহ-উপব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে ১৪টি ফেরি দিয়ে এই রুটে চলছে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার। সকাল থেকে ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে চার শতাধিক যাত্রীবাহী ছোট প্রাইভেট কার ও কয়েক শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭