রাজপথের আন্দোলন ছাড়া এই সরকারের হাত থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতারা। বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এক প্রতিবাদ সমাবেশ এ মন্তব্য করেন তারা। এ সময় এক দফা আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহবানও জানান বিএনপির নেতারা। বুধবার বেলা দুইটায় রাজধানীর মোহাম্মপুরের শহীদ পার্ক মাঠে সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশের অনুমতি না থাকায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় খিলগাঁয়ের তালতলা মার্কেটের সামনে। এদিন বেলা বারোটার পর থেকেই ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীর ঢল নামে। সমাবেশে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার, সাজা প্রত্যাহার এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের সকল নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে খিলগাঁ এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এ সময় মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যদের তল্লাশি চালাতে দেখা যায়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অত্যান্ত পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আপনারা (সরকার) ব্যর্থ হয়েছেন। সেই ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ ইসির অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন এবং অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করুন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। তারা বাড়ি, ঘর, গরু- ছাগল বিক্রি করে মামলা লড়ছে। আমাদের ছেলেরা ঢাকার রাজপথে রিক্সা চালায়! আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমাদের দাঁড়াতে হবে, এই অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবহ কৃতদাসের চেয়েও খারাপ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এই কমিশনকে অবিলম্বে এবং এই মূহুর্তে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। আমরা এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা গঠন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এতো বড় কঠিন সময় স্বাধীনতার ৫০ বছরে জাতি কখনো অতিক্রম করেনি। কিন্তু ৫০ বছর পরে আমরা কি দেখছি, সরকার আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে। এই সরকার বন্দুকের মুখে আমাদের সকল অধিকারগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, গুম খুনের জন্য আওয়ামী লীগের বিচার হবে। ভোটাধিকার হরণের জন্য নির্বাচন কমিশনেরও বিচার হবে। বিনা বিচারে কেউই ছাড় পাবে না। যুদ্ধ হবে, সংগ্রাম হবে, এসবের মাধ্যমেই গণতন্ত্র ফিরে আসবে। আর সময় কারো জন্য বসে থাকে না। আমাদের অধিকার আমাদেরকেই আদায় করতে হবে।
আমীর খসরু মাহমদু চৌধুরী বলেন, চোরের তিন দিন গৃহস্তের একদিন। সব কিছুর সীমাবদ্ধতা আছে। ভোট চুরি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব সোচ্চার হচ্ছে। ভোট চুরিতে সহযোগিতাকারীদের তালিকা হচ্ছে।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এখন মার্চ মাস। ২৫ মার্চ থেকে দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। তার ঘোষণা দিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কেন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল? গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে আমাদের ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার বলেন, রাজনীতি আজ রাজনীতিবিদের হাতে নেই। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র না থাকলে দেশ থাকবে না। দেশে উগ্রপন্থীদের উত্থান ঘটবে। এসব এই আওয়ামী লীগ সরকারের মাথায় নেই।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সরকার প্রথমে আমাদের ৬ মেয়র প্রার্থীর এই ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচি বুঝতে পারেনি। যখন বুঝতে পেরেছে তখনই বাধা দেয়া শুরু করেছে। আমাদের ফাইনাল রাউন্ডে যেতে হবে। শেখ হাসিনাকে পাল্টাতে পারলে সব পাল্টে যাবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন প্রসঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, এই রকম বেহায়া নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, কোন অর্বাচিন কী বলল সেটা ধরার বিষয় নয়। জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে। রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ইভিএম মেশিন চোর, নির্বাচন কমিশন চোর এই সরকার ভোট চোর। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।
ইশরাক হোসেন বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ঘাড়ের ওপর চেপে বসেছে। আমি বলতে চাই, তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে। আমরা এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মেনে নেব না। আমি কথা দিচ্ছি এই আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে এই রক্ষীবাহিনীর পতন ঘটাতে প্রথম বুলেটটা নেয়ার জন্য বুক পেতে দিবো। পেছনের দিক দিয়ে পালিয়ে যাবো না। আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ইনশাআল্লাহ এই সাম্রাজ্যবাদী গোষ্টির পতন ঘাটাবো।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুস সালাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল প্রমূখ।