সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি জাতিসংঘকে নিজস্ব পদ্ধতিতে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, বিগত ১লা ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরায় অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন শীর্ষক প্রচারিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন সম্পর্কে দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীর সঙ্গে আপনারাও নিশ্চয়ই অবগত আছেন। ওই প্রতিবেদনে সরকারপ্রধানের পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কতিপয় কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে তথ্য-প্রমাণসহ নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারি সকল বিবৃতিতে প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযোগসমূহের সুনির্দিষ্ট জবাব না দিয়ে রাজনৈতিক বুলি আওড়িয়ে অভিযোগসমূহ প্রত্যাখ্যান করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন কি জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকেও অপরাধ আড়ালের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার হীন অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিও সরকারের ওই সকল বক্তবের গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যার দাবি জানিয়েছিল।
ড. মোশাররফ বলেন, ইতিমধ্যে ৭টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযোগগুলো নিয়ে জাতিসংঘকে নিজের মতো করে তদন্ত এবং শান্তিরক্ষা মিশনের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি ইউনিট ও ব্যক্তিদের মানবাধিকারের রেকর্ড নতুন করে যাচাই করার আহ্বান জানিয়েছে। একদিকে সরকার আল-জাজিরার পুরো প্রতিবেদনকেই মিথ্যা ও বানোয়াট বলে নাকচ করে দিয়েছে।
অপরদিকে দায়সারাভাবে জাতিসংঘের কর্তৃক তদন্ত আহ্বানে অনাপত্তি জানিয়ে বলেছে, ‘তদন্ত হতেই পারে, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সরকারের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করবো। তবে তদন্তের জন্য জাতিসংঘ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অনুরোধ জানায়নি।’
তিনি বলেন, আবার আল-জাজিরার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে তথ্যগত ভুল আছে, সেগুলো আমরা তুলে ধরবো এবং আমরা মামলা করবো। আমরা সেটার জন্য কাজ করছি।’ অর্থাৎ আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই না করেই সরকার প্রতিবেদনটিকে ঢালাওভাবে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অথচ সঠিক তথ্যের প্রকাশই হচ্ছে ভুল তথ্যের জবাব। আর অপ্রচার থেকে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের উপায়ও হচ্ছে আসল সত্য তুলে ধরা। কিন্তু সরকার প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু উহ্য রেখে খ-িত তথ্য অথবা প্রান্তিক বিষয়ের ওপর ভর করে ‘ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব’ প্রকাশ করে চলছে।
বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় সংকটে অকাতরে কাজ করে যাওয়া দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বদা জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দুর্নীতি বা নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মের কারণে রাষ্ট্রের সংবেদনশীল এই মহান প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে প্রচারিত অভিযোগসমূহে উল্লিখিত অনেক বিষয় নিঃসন্দেহে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। দেশে ও দেশের বাইরে এসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সংবাদের কারণে উল্লিখিত অভিযোগসমূহ আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধে রূপলাভ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ শান্তি মিশনের জন্য হাঙ্গেরি থেকে আড়িপাতার যন্ত্রপাতি আমদানির কথা ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে কিন্তু জাতিসংঘ পরিষ্কার ভাষায় তা নাকচ করে দিয়েছে। এখন জনমনে প্রশ্ন অবৈধভাবে আমদানিকৃত ওইসব আড়িপাতা ও নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘনের সরঞ্জামাদি কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে? জনশ্রুতি আছে যে, এসব সরঞ্জাম বিরোধী জনমতকে দমন করার কাজে ব্যবহার করে নাগরিক অধিকার তথা মানবাধিকারের মতো সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে চলছে সরকার। যা গণতন্ত্র হত্যা তথা সংবিধান লঙ্ঘনজনিত অপরাধের শামিল। সেনাবিহিনী তথা প্রতিরক্ষা বাহিনী জাতীয় ঐক্যের গর্বিত প্রতীক। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখা দল-মত-নির্বিশেষে আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
ড. মোশাররফ আরো বলেন, আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদন দেশে-বিদেশে সকল মহলকে করে তুলেছে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। ৭টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এ বিষয়ে জাতিসংঘের নিজস্ব পদ্ধতিতে যে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করছে এবং জাতিসংঘকে তার নিজস্ব পদ্ধতিতে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আশু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছে।