ঢাকাশনিবার , ১৬ জানুয়ারি ২০২১

ভারায় খাটছে অবৈধ সব অস্ত্র।


জানুয়ারি ১৬, ২০২১ ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্রেরও অপব্যবহার হচ্ছে। লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতায় ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ বিভিন্ন পর্যায়ে টাকা খরচ করে কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে অস্ত্রের লাইসেন্স পাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৈধ লাইসেন্সধারীদের মধ্যে অনেকে নিজের অস্ত্র পেশাদার অপরাধীদের কাছে ভাড়ায় খাটাচ্ছেন। কিশোর গ্যাং নামধারী উঠতি সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন তথাকথিত রাজনৈতিক বড় ভাইয়রা। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, খুন-খারাবি সবই হচ্ছে। চট্টগ্রামে এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। তবে বৈধ অস্ত্র হওয়ার কারণে তাদের মালিকদের সহজে বাগে আনা যাচ্ছে না বলে দাবি করছে পুলিশ।

Nogod

কয়েক দিন আগে চট্টগ্রামের পাঠানটুলি এলাকায় নির্বাচনি সহিংসতায় প্রতিপক্ষের গুলিতে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ এলাকার সাবেক কাউন্সিলরসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করলেও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত অস্ত্রটি উদ্ধার করতে পারেনি। কিছু দিন আগে গোলপাহাড় এলাকায় ভোরের দিকে এলোপাতাড়ি গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে গুলিবর্ষণকারী ব্যক্তি ছিলেন বৈধ অস্ত্রধারী। কিন্তু তিনি ঐ সময় মাতাল অবস্থায় ছিলেন। মদ খেয়ে বেসামাল অবস্থায় তিনি একটি আবাসিক এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। এ ঘটনায় প্রচুর মানুষ হতাহত হতে পারত। পুলিশ আরো জানতে পারে, ঐ ব্যক্তি পেশায় গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসায়ী। এমন লো-প্রোফাইল ব্যক্তি কীভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পান তা সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে।

জানা গেছে, পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের ধরতে পারলেও প্রায়সময় অস্ত্রের উত্স অজ্ঞাত থেকে যায়। এতে পুলিশের ব্যর্থতা আছে কি না, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুধুমাত্র আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহারের জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি এখন আর ঐ পর্যায়ে নেই। কারণ চট্টগ্রামে যত অপরাধ হয় সেখানে বৈধ-অবৈধ সব রকমের অস্ত্রই ব্যবহার হয়। এত অস্ত্রের আমদানি কোথা থেকে হয়, সেটা আমাদেরও (পুলিশ বিভাগের) মনে প্রশ্ন আসে। অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের আগে আবেদনকারীর বিষয়ে ভালোমতো আরো অনুসন্ধান করার প্রয়োজন রয়েছে বলে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন

অভিযোগ রয়েছে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করা হলেও চট্টগ্রামে নীতিমালা লঙ্ঘন করে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ বানিয়ে লাইসেন্সের আবেদন করছেন অনেকেই। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান দৈনিক ভোরের খবর বলেন, কোনো আবেদনকারীকে অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের আগে বিভিন্ন এজেন্সি কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। বৈধ লাইসেন্সধারী ব্যক্তি যদি তার অস্ত্র দিয়ে কোনো অপকর্ম করেন সেক্ষেত্রে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, অনেক ধনী ব্যক্তি তার অবস্থান জানান দিতে গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করেন। তিনি গানম্যান হিসেবে বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত বা অবসরে যাওয়া এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন, যার বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। অস্ত্র আইনে এ ধরনের নিয়োগ দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও অনেকে তা লঙ্ঘন করছেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতার বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির কাজে। ফলে মোটা অঙ্কের টাকা ঢুকছে ঐসব অস্ত্র মালিকদের পকেটে। রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি ও ব্যবসার আড়ালে অনেকেই বৈধ অস্ত্রের অপব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে। অনেকে পেশাদার অপরাধীদের কাছে নিজের অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে ভাড়াও নিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অরক্ষিত সীমানা দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে নিয়মিত অস্ত্রের চালান আসছে। বান্দরবানের সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারে সন্ত্রাসীদের বেশ কিছু ঘাঁটি রয়েছে। এসব ঘাঁটি থেকে বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা হয়। পর্যায়ক্রমে এগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের কাছে চলে যায়। বৈধ অস্ত্রের ব্যবসায়ীরাও অধিক লাভের আশায় এসব অস্ত্র কেনাবেচায় জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, মূলত ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট এবং ১৯২৪ সালের আর্মস রুলস আইনের আওতায় যে কোনো সামরিক বা বেসামরিক নাগরিককে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। আবেদনকারীর জীবনের ঝুঁকি থাকলে, অর্থাত্ কেবল আত্মরক্ষার ব্যাপার থাকলে তিনি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। লাইসেন্স পাওয়ার পরই কেউ অস্ত্র কিনতে পারেন। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬-এর ভূমিকা ‘গ’-তে উল্লেখ রয়েছে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান সাধারণভাবে নিরুত্সাহিত করা হবে। এছাড়া ৩ (খ)-তে বলা হয়েছে, অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে আগ্রহী ব্যক্তির বয়স হতে হবে ৩০-এর ওপরে এবং ৭০-এর নিচে। ‘ব্যক্তি শ্রেণির’ আয়করদাতা হতে হবে। আবেদনকারী কর্তৃক আবেদনের পূর্ববর্তী দুই বছর ও আবেদনের বছর মিলিয়ে প্রতি বছর ন্যূনতম ৩ লাখ টাকা কর পরিশোধ থাকলে রিভলবার বা পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিকদের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে তিন বছর ১২ লাখ টাকা হারে রেমিট্যান্স এবং বিদেশে আয়কর প্রদানের প্রমাণপত্র থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব আইন মানা হচ্ছে না।

 

facebook sharing button
twitter sharing button
messenger sharing button
whatsapp sharing button
sharethis sharing button

✅ আমাদের প্রকাশিত কোন সংবাদের বিরুদ্ধে আপনার মতামত বা পরামর্শ থাকলে ই-মেইল করুনঃ dailyvorerkhabor@gmail.com ❌ বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।