যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের জায়ান্ট ক্রেতা ‘সিয়ার্স’-এর বিরুদ্ধে ৪ কোটি ডলার বা ৩৩৮ কোটি ৪৮ লাখেরও বেশি টাকার মামলায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক সরবরাহকারকদের একটি গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২১টি। শনিবার এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিষয়ক ম্যাগাজিন ফোবস। এতে বলা হয়, করোনা ভাইরাস মহামারি এবং পশ্চিমা জায়ান্ট ক্রেতাদের অনৈতিক ব্যবসায়িক চর্চার কারণে বাংলাদেশি এসব গার্মেন্ট বা তৈরি পোশাকের সরবরাহকারীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সিয়ার্স-এর বিরুদ্ধে মামলা করে। সেই মামলায় ৪ কোটিও বেশি ডলারের বিরল জয় পেয়েছে তারা। বাংলাদেশি ২১টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গত জুনে ওই মামলা করেছিলেন আইনজীবী জোসেফ ই. সারাচেক। তিনি বলেছেন, ওই খুচরা ক্রেতা বাংলাদেশি এসব পোশাক সরবরাহকারককে হতাশাজনক অবস্থায় ফেলেছে।
গত গ্রীষ্মে তাদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা করেছে সিয়ার্স। এ ছাড়া বেশ কয়েকবার তাদেরকে আরো জটিল অবস্থায় ফেলেছে। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার মতো অবস্থায় চলে যায়।
মামলায় বিজয়ের পর আইনজীবী সারাচেক নিশ্চিত করেছেন যে, তার মক্কেলরা ট্রান্সফরমকোর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে তাদের অর্থ ফেরত পাবেন। ট্রান্সফর্মকো হলো একটি বেসরকারি কোম্পানি। এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন মার্কিন বিলিয়নিয়ার এডওয়ার্ড ল্যাম্পার্টসের ইএসএল ইনভেস্টমেন্টস। গত বছর তারা সিয়ার্স ও কমার্টকে দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করতে অর্থ বিনিয়োগ করে। আইনজীবী আরো বলেন, আমরা সরবরাহকারীদের সুস্পষ্টভাবে উজ্জীবিত করতে পেরেছি যে, তারা তাদের অর্থের বড় অংশ ফেরত পাচ্ছেন।
সিয়ার্স এক পর্যায়ে দেউলিয়া হয়ে যায়। তাদের কাছে অনেক কোম্পানি অর্থ পাওনা থেকে যায়। কিন্তু এমন অবস্থায় সরবরাহকারীদের রেখে সিয়ার্স নিজেদের সরিয়ে নেয়। ফলে বাতিল করা অর্ডারের বিরুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশি সরবরাহকারীরা। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকে অর্ডার বাতিল হওয়ার নির্দেশের আগেই প্রায় ৬০ লাখ ডলারের পোশাক সেলাই করে ফেলেছে এবং সিয়ার্স-এর কাছে শিপমেন্ট পাঠিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে তাদেরকে প্রাথমিক পাওনা দেয়া হয়েছে। এর ফলে তারা নির্দিষ্ট একটি আর্থিক বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হন। কারখানা মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীদের মতে, অর্ডার বাতিল করায় বাংলাদেশ এবং এশিয়ার অন্যান্য স্থানে সৃষ্টি হয় এক মানবিক বিপর্যয়। তবে শুধু যে সিয়ার্স একাই এ কাজ করেছে এমন নয়। এমন কাজ করেছে বড় বড় ব্রান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা। এর মধ্যে রয়েছে ফরএভার ২১, রোজ ড্রেস ফর লেস, দ্য চিলড্রেনস প্যালেস, কোহলস কেএসএস, গ্লোবাল ব্রান্ডস গ্রুপ এবং আর্কেডিয়া। পণ্য প্রস্তুত সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও তারা কারখানাগুলোর ৪০০০ কোটি ডলার পরিশোধ করেনি। এর ফলে অনেক কারখানা দেউলিয়া হওয়ার পথে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতন ছাড়াই রাস্তায় ঠেলে দিয়েছে।
তবে এইচঅ্যান্ডএম, পিভিএইচ, ভিএফ করপোরেশন ভিএফসি, জারা এবং সিঅ্যান্ডএ সহ কমপক্ষে দু’ডজনের বেশি বিশাল বড় ব্রান্ড গত বছর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তাদের অর্ডার পুনর্বহাল করেছে। এর বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করেছে। তবে করোনা মহামারির আগে যে প্রায় ২০০০ কোটি ডলারের যে পণ্য তৈরি করা হয়েছে, তার পাওনা এখনও পরিশোধ করা হয়নি।