প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তোলা ভোট জালিয়াতির অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন মার্কিন নির্বাচন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে গঠিত একটি কমিটি নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্প শিবিরের তোলা বিতর্কের মধ্যেই বলেছে—‘এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম সুরক্ষিত নির্বাচন। কোনো ভোটিং ব্যবস্থায় ভোট হারিয়েছে, বদল হয়েছে বা অন্য কোনোভাবে পরিবর্তন হয়েছে—এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন নির্বাচন নির্বাচন কর্মকর্তারা এই ঘোষণা দেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাঁর ২৭ লাখ ভোট চুরি করা হয়েছে বলে দাবি জানানোর প্রেক্ষাপটে এই ঘোষণা এল।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শনিবার সকালে মার্কিন নির্বাচনের প্রাথমিক ফল ঘোষণা করে সংবাদমাধ্যমগুলো। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানানো দূরে থাক, নির্বাচনের প্রাথমিক ফল মেনে নিয়ে কোনো বিবৃতিও দেননি ট্রাম্প। ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের চূড়ান্ত ও সরকারি ফল এখনো ঘোষিত হয়নি। তবে গত ৭০ বছরে দ্বিতীয় ডেমোক্র্যাট হিসেবে অ্যারিজোনায় জয় নিশ্চিত করে বাইডেন তাঁর অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন। এখন তাঁর ঘরে রয়েছে ২৯০টি ইলেকটোরাল ভোট। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের রয়েছে ২১৭টি ইলেকটোরাল ভোট।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা ভোট জালিয়াতির অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া নির্বাচন কর্মকর্তাদের এই ঘোষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে করা অভিযোগ খণ্ডন করে এটিই ফেডারেল ও অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের দেওয়া প্রথম ঘোষণা। যৌথ এই ঘোষণাটি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অর্ডিনেটিং কাউন্সিল। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএস ইলেকশন অ্যাসিস্ট্যান্স কমিশন এবং অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী কর্মকর্তা ও ভোটিং মেশিন শিল্পের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই কাউন্সিল গঠিত।
বিবৃতিতে ইলেকশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অর্ডিনেটিং কাউন্সিল বলে, ‘৩ নভেম্বরের নির্বাচন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম সুরক্ষিত নির্বাচন। এই মুহূর্তে সারা দেশে নির্বাচন কর্মকর্তারা ফল চূড়ান্তের আগে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে দেখছেন। আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রমাণহীন বেশ কিছু দাবি ও ভুয়া তথ্য চাউর হলেও আমরা সবাইকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আমাদের নির্বাচনের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা এবং এতে আমাদের আস্থা অত্যন্ত উঁচু মানের। একই ধরনের আস্থা ও বিশ্বাস আপনারও থাকা উচিত। যখন আপনার কোনো প্রশ্ন থাকবে, তখন নির্বাচন পরিচালনাকারী বিশ্বস্ত লোক হিসেবে আপনার উচিত নির্বাচন কর্মকর্তাদের শরণ নেওয়া।’
এই বিবৃতির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২৮ অঙ্গরাজ্যে ভোটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে তাঁর লাখো ভোট উধাও করে দেওয়া হয়েছে বলে টুইট করেন। কিন্তু এমন দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি হাজির করেননি। টুইটারও তাঁর এই টুইটে সতর্কবার্তা জুড়ে দেয়।
এই বিবৃতিটি ডিএইচএসের সাইবারসিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সির (সিআইএসএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সিআইএসএ প্রধান ক্রিস্টোফার কার্বস নির্বাচন নিয়ে ছড়ানো গুজব প্রতিহতে ও সত্য তুলে ধরতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কার্বস টুইটারে এক নির্বাচনী আইন বিশেষজ্ঞের দেওয়া টুইট শেয়ার করেন, যেখানে লেখা ছিল-‘দয়া করে ভোটিং মেশিন নিয়ে ভিত্তিহীন ও বিপজ্জনক দাবি রিটুইট করবেন না, এমনকি তা প্রেসিডেন্টের করা দাবি হলেও।’
বলার অপেক্ষা রাখে না ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে সিআইএসএ কর্মকর্তাদের ওপর খড়্গহস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে সিআইএসএর সহকারী পরিচালক ব্রায়ান ওয়্যার হোয়াইট হাউসের নির্দেশে পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। একই পরিণতি কার্বসেরও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প নিঃসন্দেহে বাঁকা পথেই হাঁটছেন। পরাজয় না মেনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের ফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করেছেন তিনি। সঙ্গে রয়েছে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ। কিন্তু এ অভিযোগ দিয়ে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত আর বেশি দূর এগোতে পারবেন না বলেই মনে হয়। বাইডেনকে অভিনন্দন না জানিয়ে চীন ও রাশিয়ার মতো দেশ ট্রাম্পকে কিছুটা আশা দেখালেও, এখন তা উবে যাচ্ছে। দীর্ঘ নীরবতার পর জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মার্কিন জনগণের পছন্দকে সম্মান জানাই।’ তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে সরকারি ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।