কেএম সবুজঃ ঈদ আসে আনন্দ আর খুশি নিয়ে। কিন্তু ঈদ আসলেও ছিল না চিলমারীর বানভাসীদের মনে আনন্দ বা খুশি। ঘরবাড়ি থাকলেও বানভাসীদের ঈদ কাটলো বাঁধে ও সড়কে। কথা বলতেও নারাজ তারা। মনে যেন কষ্টে ভরা দু’চোখ করছে ছল ছল। কথা বলতে বলতে আক্ষেপের সুরে বাঁধে আশ্রয় নেয়া সাতঘরি পাড়ার সাবেনি (৬০) বলেন, ‘হামার ঈদ বানে নিয়ে গেছে বাবা। ঘরত জমানো চাউল নাই, তিনবেলা খাবার জোটে না, সবাই মিলে একটা ছাপড়ার নিচে কোন মতো মাথা গুঁজে থাকি। বাড়িঘরে এখনো পানি এবারের ঈদ কেমন আইলো কেমনে গেল সেটাও টের পাইলাম না।
জুটলে খাই, না জুটলে নাই।’ একই কথা বলেন, এলাকার বৃদ্ধা মতিজান বেওয়া (৮০) ও কেচি সড়কে আশ্রয় নেয়া রাজু মিয়া। রমনা বাঁধে আশ্রয় নেয়া আঃ খালেক জানান, কষ্টে হামার জীবন গাথা তোমরা শুইনে কি করবেন। মাস পেরিয়ে গেলেও খবর নেয়নি কেউ। ঈদের দিন সরেজমিন রাজারভিটা, টোলোর মোড়, জোড়গাছ, সাতঘড়ি পাড়া, খড়খড়িয়া, কুষ্টারীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এখনো ডুবে আছে পানির নিচে গ্রাম গুলো। বাড়ি ঘরে এখনো বুক ও কমোর পানি ফিরতে পারেনি বানভাসী। শত শত পরিবার এখনো কেচি সড়ক, রাস্তা, বাঁধ, রেল সড়কে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঈদের দিনটিও ছিল তাদের কাছে অন্য দিনের মতো ছিল দুঃখ কষ্ট ভরা। যদিও আশা ছিল ঈদ কাটবে নিজ গৃহে সাজাবে ঘরগুলো কিন্তু সেই আশা ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। অনেকে ধনাট্যদের দেয়া সামান্য কয়েক টুকরো মাংস দিয়ে ভাত খেলেও অনেকের ভাগ্যে জোটেনি এক টুকরো মাংস। মাংস বা ভালো খাবার না জুটলেও তারা চায় বন্যা থেকে মুক্তি। চায় নিজ গৃহে ফিরতে। চায় নিজ বাড়িতে আনন্দ করতে শিশুরা চায় নিজ মনে খেলতে। কিন্তু পানি নেমে না যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পরেছে শিশু, বৃদ্ধাসহ বানভাসীরা। তাদের কষ্ট এখন বন্যার পানি সৃষ্টি করেছে জলাবদ্ধতা।
জানা গছে, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ৩য় দফার বন্যার পানি ব্রহ্মপুত্রের পানির কমার সাথে সাথে নামতে শুরু করেছে। চরাঞ্চলগুলো এখন বন্যা থেকে মুক্ত তবে দীর্ঘ বন্যার কবলে পড়া উপজেলা সদরসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম এখনো বন্যার কবলে। বাঁধের ভাঙ্গা অংশ নিয়ে ঢুকে পড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি সহজে বের হতে না পারায় হাজার হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি থেকে দুর্ভোগে রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে বাড়িঘর ছাড়া মানুষজন চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন উঁচু স্থানে, আশ্রয় কেন্দ্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঈদের দিনটিতেও ছিলনা তাদের মাঝে আনন্দ উল্লাস তবে ছিল দুঃখ কষ্ট আর দুর্ভোগ। আবার অনেকে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বাড়িঘর হারিয়ে হয়েছে আশ্রয়হীন। ভাঙ্গন আর দফায় দফায় বন্যায় এই অঞ্চলের মানুষ যেন দিশাহারা হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গনের শিকার গ্রামবাসী জানান, মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকার নদীর পারেই রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা স্বীকার করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম বলেন, আমরা চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছি বন্যার ও নদী ভাঙ্গন থেকে এই অঞ্চলের মানুষ ও জনপদকে রক্ষা জন্য। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ বলেন, আমরা নদীভাঙ্গন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ দেয়া দেয়া হচ্ছে।