বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকা-কুমিল্লার মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ডাকাতির ঘটনা ঘটেই যা”েছ। তবে বেশিরভাগই ঘটে মোটরসাইকেল আরোহীদের সাথে। জানা যায়, ঢাকা থেকে ফেরা মোটরসাইকেল আরোহীদের তার্গেট করে আইনশঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে পথরোধ করে এই চক্রটি। এরপর চেকপোস্টের নামে নিয়ে যাওয়া হয় নির্জন এলাকায়। যেতে না চাইলেই শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। এ বিষয়ে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের দিকে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরা সোহেল রানা বলেন, সে একজন বীমা কর্মকর্তা। সে মাঝে মাঝেই মোটরসাইকেল নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে যেতেন। হঠাৎ একদিন আইনশঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে পথরোধ করে দুজন ব্যাক্তি। এসময় তাকে চেক করার কথা বলে একটু দূরে নির্জন স্থানে নিয়ে যেতে চাইলে সে সংকোচবোধ করায় সেখানেই শুরু হয় নির্যাতন। এক পর্যায়ে সোহেল রানা মাটিতে শুয়ে পড়লে, তার কাছে থাকা (মানিব্যাগের) টাকা ও বাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।
এমন ছিনতাইয়ের স্বীকার হয়েছেন এমন অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে।
চলমান স্যোসাল মিডিয়ায় এ ধরণের একটি ঘটনা ভাইরাল হয়েছে। মোঃ সিরাজুল ইসলাম সবুজ নামের এক ব্যাক্তি ঢাকার ইন্টারনেট কোম্পানেিত চাকরি করতেন। কোভিড-১৯ তে লকডাউন হওয়ার পর চাকরি গেলে সে সকল পাওনাদি নিয়ে বাড়ি ফিরছিল তার শখের বাইকটি নিয়ে। যার মডেল-( YAMAHA FZ V2 150) এর একই ঘটনার মুখোমুখী হয় সে। তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া পোস্টটি হুবহু তুলে ধরছি...
আমি একজন সাধারণ চাকুরীজীবি। ঢাকায় একটা ইন্টারনেট কোম্পানিতে চাকুরীরত ছিলাম। ১৮ই মে অনেক কষ্টে বেতনের টাকা থেকে সঞ্চয় করে আর কিছু টাকা ধার করে মহামারীর এই পরিস্থিতিতে একটা বাইক ক্রয় করি কর্মস্থলে যাতায়াত সুবিধার্থে।
বাইকের মডেল ( YAMAHA FZ V2 150). দুর্ভাগ্যবশত করোনা ভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতির কারনে আমাকে জুন মাসেই চাকুরীচ্যুত করা হয়। কোম্পানি থেকে বেতন পাওনা বুঝে আমি রোজ ২৫/৬/২০২০ তারিখ ছিয়াত্তর হাজার টাকা(৳৭৬০০০), বাইকের প্রয়োজনীয় কাগজ সহ আমার প্রয়োজনীয় কিছু কাগজ পত্র নিয়ে গ্রামের বাড়ি শ্রীপুর, কুমিল্লার উদ্দেশ্যে আমার বাইক নিয়ে রওনা হই সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ এর দিকে।
পথিমধ্যে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ আসার পর একটা Apache RTR বাইকে তিন আরোহী আমাকে লেজার লাইট দিয়ে সিগন্যাল দেয় থামার জন্য। তাদের হাতে বিশেষ লেজার লাইট ছিল যা সাধারণত ট্রাফিক পুলিশরা ব্যাবহার করে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা আমার পথ আটকায় এবং তাদের পরিচয় দেয় তারা সিভিল পুলিশ, আমার কাছে মাদক আছে তাই আমাকে চেক করবে। আমার কাছে যেহেতু কোনো প্রকার মাদক ছিল না আর আমি এইসব ব্যাপারে খুব বেশি কিছু বুঝতাম না বলে আমি তাদের সাথে তর্কে যাই নি। তারা আমাকে চেক করবে ভেবেছিলাম, কিন্তু হুট করেই তাদের মধ্যে একজন আমার হাত থেকে আমার গাড়ির চাবি নিয়ে আমাকে বলে বাইকে উঠতে আমাকে তারা থানায় নিয়ে যাবে। আমি তাদের কথা মত বাইকে উঠি আর তারা কুমিল্লার দিকে ড্রাইভ করতে থাকে। তাদের একজন আমার বাইক চালাচ্ছিল আর বাকি দুজন Apache বাইক টায় আমার পিছনে ছিল। আমার বাইক যে ড্রাইভ করছিল সে নীরব রাস্তা দেখে প্রায়ই বাইক স্লো করছিল। তখনো আমি কিছু উঠতে পারছিলাম না।
এভাবে কিছুদূর যাওয়ার পর তারা একটা নীরব জায়গায় রাস্তার পাশে দাড়ায় আর আমার ব্যাগ চেক করার জন্য নিয়ে যায়। যাতে আমার ছিয়াত্তর হাজার টাকা ছিল। ব্যাগে হাত দিয়ে টাকা পায় এবং তারা টাকার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি বলি এইটা আমার টাকা। তারা আমাকে মাদক ব্যাবসায়ী বলে হুমকি দিতে থাকে। আমি ভয়ে তাদের কাছে অনেক অনুনয় করে বলি এইটা আমার বেতনের টাকা। কথাবার্তার একপর্যায়ে তারা আবার আমাকে বলে বাইকে উঠতে। আমি তাদের কথামত বাইকে উঠি এবং তারা আবার কুমিল্লার পথ ধরে ড্রাইভ করতে থাকে।
রাত আনুমানিক ৯ঃ৩০ এর দিকে বুড়িচং থানার
থানাধীন কালাকচুয়ায় বিরতি হোটেলের পশ্চিম পাশে থামায় আর আমার পিছনে থাকা এপাচি গাড়িটা আমার গাড়ি থেকে অনেকটা সামনে গিয়ে থামে। ছিনতাইকারীদের মধ্যে যে আমার বাইক ড্রাইভ করছিল সে আমাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে। আমি নামা মাত্র সে গাড়ি নিয়ে টান দিতেই আমি তাকে থামানোর চেষ্টা করি আর সে সাথে সাথে স্ব জোরে আমার বুকে ঘুষি মারে। ঘুষির পাওয়ার এত বেশি ছিল যে আমার শ্বাস এক প্রকার আটকে যাচ্ছিল। সে আমাকে ঘুষি মেরে আমার বাইক টা নিয়ে চোখের সামনে পালিয়ে যায় আর অন্য দুজন এসে আমাকে বেধড়ক মারধর করে চলে যায়।
তারপরে আমি কোনোভাবে দাড়িয়ে আশেপাশে লোকজন খুজে তাদের ঘটনার বিবরণ দেই। তারা আমাকে আন্তরিকতার সাথে বাড়ি যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দেন। আমি বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নেই। কিন্তু এখনো সুস্থ হয়ে উঠতে পারিনি। তারপর আমি গত ২৯/০৬/২০২০ তারিখ বুড়িচং থানায় মামলা করি।
আমি জানি না আমার কষ্টের টাকায় কেনা আমার এই গাড়িটা আমি আর পাবো কিনা। কিন্তু আমার সাথে যা হয়েছে আমি চাই না আর কোনো ভাইয়ের সাথে এমন হোউক। আজ তারা আমাকে আহত করেছে, যদি আমাকে হত্যা করে ফেলে রাখতো। কেউ হয়তো বুঝতেও পারতো না। আমার মত যেন কোনো মায়ের সন্তানের এমন পরিস্থিতির স্বীকার না হতে হয়, আমার মত মধ্যবিত্ত ঘরের কারোর সাথে যেনো এমন অন্যায় না হয়, আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। আমার ঘরের একমাত্র উপার্জনকারী আমি। আমার এই টাকা আমি গ্রামের বাড়িতে ঘর বানানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার সব কিছু হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। আপনারা কেউ আমার সাহায্য করুন।
আপনাদের একান্ত সাহায্য প্রার্থী।
বিঃদ্রঃ নিচে মামলার কপি ও আমার বাইকের মালিকানার প্রমাণ ছবি আকারে দিয়ে দিলাম।
উল্লেখ্য, এই বিষয়ে প্রসাশনের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন সচেতন মহল।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭