রাজন সরকারঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতের পরিবর্তে সরকার ‘মেগা প্রকল্প’কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তিন এই অভিযোগ করেন।
বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ড্যাব এর উদ্যোগে চিকিৎসক ও চিকিৎসক পরিবারকে সহযোগিতার জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা সার্ভিস, মুমুর্ষ রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবারহ, প্লাজমা ডোনার তালিকা প্রণয়ন, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা কার্য্ক্রম উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। বিএনপি মহাসচিব ইন্টারনেটের মাধ্যমে বক্তব্যের পর ড্যাবের মগবাজার অফিসের সামনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ অন্যান্য কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের স্বাস্থ্যখাত তাদের (সরকার) প্রায়োরিটিতে নেই। তারা এই জায়গাটাতে কোনো প্রাধান্য দেয় না। তাদের প্রধান্য একটাই যে, তারা মেগা প্রকল্প তৈরি করবে এবং মেগা প্রকল্পে মেগালুট করবে এবং দুর্ণীতির একটা মহোতসব চলছে। আপনারা দেখেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত কিট এখনো সরকার অনুমোদন দেয়নি। সব কিছুর পেছনে তাদের (সরকার) যে উদ্দেশ্যটা কাজ করেছে বা করছে সেই উদ্দেশ্যটা হচ্ছে দুর্ণীতি। জনগনের সমস্যা সমাধান করার কোনো কাজ তারা করতে চাননি কখনো এবং করবেনও না।
তিনি বলেন, একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে- এটা একটা একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকার।
একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকার কখনোই জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে না। গণতান্ত্রিক একটি সরকার, গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা এটাই একমাত্র এই ধরনের যে বিশ্ব মহামারী সেই মহামারীকে মোকাবিলা করার উপযুক্ত হতে পারে। আসুন এই দুঃসময়ে আমরা জনগনের পাশে দাঁড়াই। জনগনকে সঙ্গে নিয়ে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করি, জীবিকাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। একই সঙ্গে এই রাষ্ট্র যেন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পারে তার জন্য আমরা সবাই কাজ করি।
দেশের আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে উল্লেখ কওে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের চিকিৎসা করবার জন্য যে সুরক্ষা দেয়া, সেই সুরক্ষা দেয়ার সুযোগটুকু তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। এখনো যেটা করেছেন সেটা কতটুকু আমরা জানিনা। আমরা কিন্তু এই বিষয়গুলো তুলে ধরেছি, আমরা আমাদের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেছি। আমাদের পরিস্কার অর্থে বলেছি, এমনকি যারা চিকিৎসা করছেন করোনাভাইরাসের বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের জন্য বড় বড় যে হোটেলগুলো রয়েছে, সেই হোটেলগুলোকে নিয়ে নেয়া হোক, তাদেও সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হোক।
করোনাভাইরাস শনাক্ত পরীক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। আজকের পত্রিকায় দেখলাম যে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ধরনের প্যান্ডেমিককে যদি মোকাবিলা করতে হয় সবার কাছে যে জিনিসটা দরকার সেটা হচ্ছে সঠিক তথ্য। তারা সঠিক তথ্যটাও দিচ্ছে না, সঠিক তথ্য দেশের মানুষ সঠিকভাবে পাচ্ছে না। যেহারে সংক্রমণ বেড়েছে এবং বাড়ছে প্রতিনিয়ত এটা সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যেতো যদি সরকার প্রথম থেকে আন্তরিক হতো এবং সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ব্যবস্থাগুলো গ্রহন করতো।
সংসদে উপস্থাপিত ২০২০-২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছন বাজেট দিয়েছে এই সময়ের মধ্যে। আমরা গোটা জাতি আশা করেছিলাম এবারকার বাজেটটা আপদকালীন বাজেট। মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতালগুলোকে ইকুপ্ট করা হবে। অক্সিজেনের জন্য মানুষ পাগল হয়েছে আছে কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যাবে। সিলিন্ডার নেই, আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেটার নেই। এসব প্রথম থেকে বলা হয়েছে যে, এসব জরুরীভিত্তিতে যোগাড় করা হোক, ব্যবস্থা করা হোক। তারা সেটার দিকে কেনো গরজ করেনি। করোনাভাইরাস সংক্রামণ পরিস্থিতির মধ্যে জনগনের পাশে দাঁড়ানোর ড্যাব ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
ড্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. আবদুস সেলিমের পরিচালনায় ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম শাকিলসহ চিকিৎসক নেতারা বক্তব্য রাখেন।