কোনো সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত নয়। ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে সিদ্ধান্ত। চার মাস ধরে এমনটাই চলে আসছে। রেড জোন ও লকডাউন ঘিরে তা যেন পরিপূর্ণ মাত্রা পেলো। রীতিমতো গবেষণা চলছে রাজধানী শহর নিয়ে। যেটি দেশের সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত এলাকা। সর্বশেষ খবর হলো, ওয়ারির কিছু এলাকাকে রেড জোন ঘোষণার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পূর্ব-রাজাবাজারে রেড জোন কার্যকর আছে আগে থেকেই।
বলা হচ্ছে, এটা পরীক্ষামূলক। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে পরীক্ষা করতে করতেই জুন মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ পরীক্ষা কবে শেষ হবে অথবা আদৌ শেষ হবে কি না তাও হলফ করে বলা কঠিন।
এটা ঠিক সারা দুনিয়াই করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। বাঘা বাঘা রাষ্ট্রনায়কদের ঘুম হারাম। কোথাও কোথাও তারা রীতিমতো কাঠগড়ায়। নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে, পাওয়া যাচ্ছে পরিবর্তিত তথ্য। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে বারবার। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এতো পরিবর্তন সম্ভবত আর কোথাও হয়নি। যেন রীতিমতো গবেষণা চলছে। যদিও বৈজ্ঞানিক তেমন কোনো গবেষণার খবর পাওয়া যায়নি।
করোনার শুরুতে প্রতিদিনই শোনা যেতো আমরা প্রস্তুত। প্রস্তুতি কেমন ছিলো এখন অবশ্য তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। মার্চের শেষ দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। যা ছিল অনেকটাই অঘোষিত লকডাউন। কিন্তু লকডাউন শব্দটি মুখে আনা হয়নি। তা কার্যকরও হয়নি। শুরুতেই ঈদের ছুটির মতো বাড়িমুখী হয়েছে মানুষ। আসল ঈদ এলে শুরুতে বলা হলো, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকতে হবে। কঠোর একটা অবস্থান। পরে জানানো হয়, ব্যক্তিগত গাড়িতে যাওয়া যাবে। বিধিনিষেধ ওঠে গেলে ফের বাড়িমুখো হয় মানুষ। পোশাক কারখানা খোলা নিয়ে দফায় দফায় নাটক হয়েছে। ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে শ্রমিকদের। দুই মাসের সাধারণ ছুটি শেষে জুনের শুরু থেকে আলোচনায় আসে নানা রং। লাল, হলুদ, ইয়েলো জোন। নানা রকম হিসাব। একদিন শুরুতে প্রজ্ঞাপন জারি হয়, রেড ও ইয়েলো জোনে সাধারণ ছুটি। ঘণ্টা কয়েকপরেই আবার সংশোধনী আসে। এবার বলা হয়, শুধু রেড জোনে সাধারণ ছুটি। কিন্তু জোন যে কোথায় তা আজো স্পষ্ট হয়নি। যদিও ঢাকার বাইরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু এলাকাকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু করোনার সবচেয়ে বড় হটস্পট ঢাকাকে নিয়ে এখনো চলছে নানা মুখী চিন্তা। গত ৯ই জুন থেকে পূর্ব রাজাবাজারে পরীক্ষামূলক লকডাউন চলছে। শুরুতে ঢাকার ৪৫টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, সে তালিকা চূড়ান্ত নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ গতকাল বলেছেন, ওই তালিকা চূড়ান্ত নয়। রেড জোনে শিল্প কারাখানা, বড় বড় প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কথাও বলছেন তিনি। এখন যা জানা যাচ্ছে, পুরো বিষয়টি নিয়েই নানা রকম চিন্তা চলছে। তালিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। রেড জোনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। হালনাগাদ করা হচ্ছে রেড জোনের তালিকা। কবে চূড়ান্ত হতে পারে এ তালিকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অন্তত আরো দুই সপ্তাহ লাগবে।
এবার পরীক্ষা ওয়ারিতে: রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের পর এবার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে ওয়ারির নির্দিষ্ট কিছু এলাকাকে রেড জোন ঘোষণার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান। অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের ওয়ারির নির্ধারিত এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে রেড জোন বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পরামর্শক কমিটির গাইডলাইন অনুযায়ী পূর্ব রাজাবাজারে রেড জোন চলমান আছে। স্থানীয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে যেখানে প্রয়োজন রেড জোন বাস্তবায়নের কাজ চলমান আছে। ডা. নাসিমা বলেন, জোনিং নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে ১৩ সদস্যের একটি দল কাজ করে যাচ্ছে। স্থায়ীভাবে কোনো অঞ্চল বা এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা বা বাতিল করা হয়নি। রেড জোন, গ্রিন জোন বা ইয়োলো জোনিং একটি চলমান প্রক্রিয়া। যা সংক্রমণ বিস্তারের সর্বাধিক, মাঝারি ও কম ঝুঁকির ওপর নির্ভর করে।
করোনা কেড়ে নিলো আরো ৩৪ প্রাণ: দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৩৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নতুন করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৩৫০৪ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৮ জনে। সর্বমোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৯৫ জনে। গতকাল করোনা বিষয়ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে এই তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, দেশে নতুন করে আরো একটি করোনা পরীক্ষার ল্যাব যুক্ত হয়েছে। এতে মোট ল্যাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৭টি। তবে আজকে ৫৮টি ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৫৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের নমুনাসহ মোট পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ১৫৭টি। তিনি বলেন, মোট নমুনা পরীক্ষায় দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩৪ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো এক হাজার ৬৯৫ জনে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরো ৩ হাজার ৫০৪ জন। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো এক লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৮ জনে। নাসিমা সুলতানা বলেন, এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হলো ৭ লাখ ১২ হাজার ৯৯টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরো তিন হাজার ৫০৪ জনের মধ্যে। শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ। নতুন করে যে ৩৪ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ৩২ জন ও নারী দু’জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ২৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ৩৪ জনের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০-৩০ বছর বয়সী একজন, ৩০-৪০ বছর বয়সী একজন, ৪০-৫০ বছর বয়সী ৬ জন, ৫০-৬০ বছর বয়সী ৬ জন, ৬০-৭০ বছর বয়সী ১৩ জন এবং ৭০-এর বেশি বয়সী ৭ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ঢাকা বিভাগের, ১০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪ জন সি?লেট বিভাগের, ৪ জন রাজশাহী বিভা?গের, একজন খুলনা বিভাগের ও রংপুর বিভাগের ২ জন। ৩০ জন হাসপাতালে এবং ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বাসায়। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরো এক হাজার ১৮৫ জন। সবমিলিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা এখন ৫৪ হাজার ৩১৮ জন। সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।