নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করার প্রায় তিন মাস পর নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটের জন্য বিশেষায়িত বেড হাসপাতালে পৌঁছেছে। রোববার মধ্যরাতে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিটের জন্য দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা বিশেষায়িত বেডগুলো হাসপাতালে পৌঁছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপে দীর্ঘদিন পর আইসিইউ ইউনিটের জন্য বেডগুলো বুঝে পাওয়ায় আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. গৌতম রায়। সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে বেরিয়ে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, প্রায় ৩ মাস আগে করোনা চিকিৎসার জন্য গত ১৩ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়। এরমধ্যে ৪০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট থাকার কথা। কিন্তু আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু এবং সেখানে করোনা রোগিদের চিকিৎসা শুরু হলেও ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিটটি চালু হচ্ছিল না। পরে এ ব্যাপারে আমি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, এমন কি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফ’র প্রধানের সহযোগিতা নিয়েছি। সবার সহযোগিতায় অবশেষে রোববার রাতে আইসিইউ ইউনিটের জন্য বিশেষায়িত বেডগুলো আমরা হাতে পেয়েছি।
একাজটি যাদের জন্য সহজ হয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শামীম ওসমান।
শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে গত ৩ দিন যাবৎ কিটের অভাবে (শনি থেকে সোম) করোনার নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কেন? যাদের উপর কিট আমদানির দায়িত্ব ছিল তারা কার্যাদেশের বাইরে গিয়ে ভিন্ন ধরনের কিট আমদানি করায় এই সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। কিটের এই সংকটের নেপথ্যের কারণ আমি জানতে পেরেছি। নারায়ণগঞ্জের পিসিআর ল্যাবে যে কিট ব্যবহার করা হয় তা নিয়েও অবহেলা ও চরম দায়িত্বহীনতার কথাও জেনেছি। নারায়ণগঞ্জের ল্যাবে যে কিট ব্যবহার করা হয় সেটি হলুদ রঙের কিট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থরা জানালেন, ৩০ হাজার কিটের মধ্যে ১০ হাজার হলুদ কিট ও ২০ হাজার লাল কিট সরবরাহের কথা থাকলেও অজানা কারণে ৩০ হাজারই লাল কিট সাপ্লাই দেয়া হয়েছে। তাহলে কার্যাদেশের বাইরে কিভাবে তারা ১০ হাজার লাল কিটের স্থলে ৩০ হাজার লাল কিট দিয়ে দিলেন সেটি আমার বোধগম্য নয়। যাদের এই কাজগুলো করার দায়িত্ব দিয়ে বসানো হয়েছে তারা যোগ্য বলেই দেয়া হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন উঠে, যোগ্যতা থাকার পরেও কেন এমন অবহেলা? সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য কোন পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে কি? তাই সর্ষের মধ্যেও ভূত আছে কিনা, সে বিষয়টি যাচাই করার সময় এসেছে। শামীম ওসমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে যারা কিট নিয়ে ব্যবসা করতে চান, ধান্ধা করতে চান, বি কেয়ারফুল। জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। টাইম ইজ কামিং। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যতটুকু চিনি কাউকে ছাড় দিবে না। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি ছাড় পাবেন না। এক সময় আওয়াজ উঠেছিলÑ আমরা যখন তরুণ ছিলাম, ‘তুই রাজাকার’। সামনে কিন্তু আওয়াজ উঠবে ‘তুই চোর’। কিছু সংখ্যক মানুষের জন্য আমরা এই খাতটার (চিকিৎসা) কাছে আমরা অসহায়।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যার উন্নয়নে অপর সংসদ সদস্য আমার বড় ভাই সেলিম ওসমান কোটি কোটি টাকা ব্যক্তিগত ভাবে অনুদান দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আমি ও আমার বড় ভাই সেলিম ওসমান ব্যবস্থা করেছি। হাসপাতালে গড়ে ৩০-৩৫ জন করোনা রোগি চিকিৎসাধীন থাকলেও সরকারি হিসেবে দেখানো হচ্ছে সেখানে ৭০ জন রোগীর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে শামীম ওসমানের আহবানে সোমবার থেকেই নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় অবস্থিত প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতাল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বন্দরের মদনপুরে অবস্থিত আল বারাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি এবং চিকিৎসা সেবা দেয়ার ঘোষণা দেন। নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডা. গৌতম রায় বলেন, আইসিইউ ইউনিটের জন্য ১০টি বিশেষায়িত বেড তারা রোববার রাতে হাতে পেয়েছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আইসিইউ ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। এ ইউনিটটি চালু হলে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা, বিশেষ করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ^াসকষ্টে ভোগা রোগীদের কষ্ট লাঘব সম্ভব হবে। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন, সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ, জেলার করোনা ফোকাল পার্সন ডা. জাহিদুল ইসলাম, আল বারাকা হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাত্তার মো. সুমন ও প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের চিকিৎসক ডা. মজিবুর রহমান প্রমুখ।