স্টাফ রিপোর্টারঃ অদ্ভুত এক প্রেম কাহিনীতে জড়িয়ে পড়লেন জকিগঞ্জের প্রবাসী বধূ তামান্না আক্তার। ৬ দিন ছিলেন নিখোঁজ। এই সময়ে তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না পরিবারের। ওমানে থাকা স্বামী শফিকও ছিলেন অস্থির। অবশেষে শুক্রবার সন্ধ্যার একটু আগে তাকে জকিগঞ্জের আটগ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রবাসী বধূ তামান্না উদ্ধার হলেও তার প্রেম কাহিনীর মীমাংসা কোনো ভাবেই হচ্ছে না। এ কারণে নিখোঁজের পর দায়ের করা জিডির সূত্র ধরে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ওই প্রবাসী বধূকে গতকাল শনিবার বিকালে গোলাপগঞ্জ থানায় পাঠিয়েছে। তামান্না আক্তার।
বয়স ২৪ কিংবা ২৫ বছর। জকিগঞ্জের আটগ্রামের মরইরতল গ্রামের ওমান প্রবাসী শফিকুর রহমানের স্ত্রী। ২০১৬ সালে শফিক ও তামান্নার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর শফিক স্ত্রী তামান্না আক্তারকে নিজ বাড়িতে রেখে ওমানে চলে যান। পারিবারিক ভাবে তাদের মধ্যে সম্পর্কের ঘাটতি কখনো লক্ষ্য করা যায়নি। বরং বিদেশ থেকে স্বামী শফিকুর রহমান পরিবার ও স্ত্রীকে টাকা পাঠাতেন। প্রায় তিন বছর আগের ঘটনা। একদিন মোবাইল ফোনের প্রযুক্তির মাধ্যমে ইমুতে যোগাযোগ হয় জকিগঞ্জেরই কামালপুর গ্রামের দুবাই প্রবাসী আসাদ উদ্দিনের সঙ্গে। এরপর থেকে তাদের দু’জনের ইমুতেই যোগাযোগ বাড়ে। সেটি প্রেমের সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়। প্রায় প্রতিদিনই ইমুতে দুবাই থাকা প্রবাসী আসাদ উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় তামান্নার। বিষয়টি কেউ জানতো না। স্বামী কিংবা তার পরিবারের লোকজনও জানতেন না। আসাদ উদ্দিন বর্তমানে দুবাই প্রবাসী। তামান্নার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলেও তখনো স্বশরীরে তাদের দেখা হয়নি। তামান্না আক্তারের বাড়ি জকিগঞ্জে। তবে তিনি গোলাপগঞ্জ পৌরসভার চৌমুহনী এলাকার একটি ফার্মেসিতে এসে ডাক্তার দেখাতেন। ছোট ভাই মিজানুর রহমান মিজানকে নিয়ে গত রোববার দুপুরে গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে আসেন তামান্না আক্তার। ফার্মেসির সামনে বোন তামান্নাকে রেখে পানি আনতে যান মিজান। একটু পর ফিরে এসে দেখেন তার বোন নেই। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না। আশেপাশে খুঁজেও বোনকে পাননি। বিষয়টি তিনি জানান পরিবারকে। পরে সোমবার তিনি গোলাপগঞ্জ থানায় গিয়ে বোন হারানোর সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছিলো। গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশের পাশাপাশি জকিগঞ্জ থানা পুলিশও বিষয়টি নিয়ে অবগত ছিল। আর হঠাৎ করে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পরিবারের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। শুক্রবার বিকালে দুবাই প্রবাসী প্রেমিক আসাদের দুই স্বজনকে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাযোগে পিতার বাড়ি মানিকপুরের মোহাম্মদপুরে যাচ্ছিলেন তামান্না। এ সময় জকিগঞ্জ থানা পুলিশ রতনপুরের নিকটবর্তী এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে। রাতে নিয়ে যাওয়া হয় জকিগঞ্জ থানায়। উদ্ধারের পর তাকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। উদ্ধারের পর তামান্না পুলিশের কাছে নিখোঁজের ঘটনাটি খুলে বলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তামান্না। এ সময় তামান্না জানান, ‘প্রায় ৩ বছর আগে দুবাইয়ে থাকা আসাদের সঙ্গে ইমুতে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আসাদ সব সময় তাকে ফোন দিতো। তারা ফোনে কথা বলতো। আসাদও বিবাহিত। তবে বাড়িতে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে তার বনিবনা নেই। এ কারণে সে ওই স্ত্রীকে ডিভোর্স দেবে। এরপর আমাকে বিয়ে করবে।’ তামান্না জানান, ‘পূর্বের কথামতো ঘটনার দিন আমি যখন ফার্মেসির সামনে যাই তখন আসাদের স্বজনরা গাড়ি নিয়ে আসেন ওখানে। ভাই মিজান পানি আনতে গেলে ওদের সঙ্গে গাড়িতে করে চলে যাই।’ নিখোঁজের ৬ দিন সে বিয়ানীবাজারের কালিজুড়ি গ্রামে আসাদের দুলাভাই শাহাবুদ্দিনের বাড়িতে ছিল বলে জানান। এরপর নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে পুলিশ তাকে আটক করেছে। এদিকে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ প্রবাসী বধূ তামান্নাকে উদ্ধারের সময় সিএনজি অটোরিকশা থেকে দুবাই প্রবাসী আসাদের স্বজন সুহেল আহমদ ও আব্দুল হককে গ্রেপ্তার করেছে। রাতে তারাও ছিল থানায়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, আসাদের পরামর্শ মোতাবেক তারা তামান্নাকে কালিজুড়ি নিয়ে গিয়েছিলো। সেখানে রাখার পর তাকে পিতার বাড়ি ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছিলো। নিখোঁজের ৬ দিন তামান্না কালিজুড়িতে আসাদের বোনের বাড়িতে ছিল বলে জানায়। এদিকে জকিগঞ্জে উদ্ধার হলেও তামান্না নিখোঁজের জিডি দায়ের করা হয়েছিলো গোলাপগঞ্জ থানায়। এ কারণে গতকাল শনিবার বিকালে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ আটক দুইজন সহ তামান্নাকে গোলাপগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে। জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল গোলাপগঞ্জ। জিডি করা হয়েছিলো ওই থানায়। এ কারণে উদ্ধারকৃত তামান্না সহ দুইজনকে ওই থানায় পাঠানো হয়েছে। এদিকে তামান্নার এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্বামীর বাড়ি ও পিতার বাড়ির পরিবারের লোকজন। তাদের দাবি তামান্নাকে জোরপূর্বক অপহরণ করা হয়েছে। তামান্নার ছোট ভাই মিজানুর রহমান মিজান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘আমার বোনকে জোরপূর্বক ওরা গোলাপগঞ্জ সদর থেকে নিয়ে যায়। উদ্ধারের পর থেকে বোনের মানসিক অবস্থা ঠিক নয়। তাকে মানসিক ভাবে টর্চার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা গোলাপগঞ্জ থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ গোলাপগঞ্জ থানার ওসি আবুল কাশেম জানিয়েছেন, তামান্না উদ্ধার হয়েছে এটি স্বস্তির খবর। এখন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।