কেএম সবুজ(বিশেষ)প্রতিনিধিঃ নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের দোগাছি গ্রামের দীনহীন পরিবারে জন্ম নেয়া মেধাবী কলেজছাত্রী টুম্পা খাতুনের (১৮) দু’চোখ ভরা স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শিখে বিসিএস ক্যাডার হবে। কিন্তু জেএসসি ও এসএসসি-তে জিপিএ-৫ পাওয়া টুম্পার সে স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে একমাত্র উপার্জনক্ষম ভ্যানচালক বাবাসহ পরিবারের চার সদস্যের অসুস্থতা। বর্তমানে অর্থাভাবে লেখাপড়া বন্ধ তো হয়েছেই, উল্টো পরিবারের ৬ সদস্যের আহার ও অসুস্থদের চিকিৎসা খরচ যোগাতে বাধ্য হয়ে নারীর জন্য ব্যতিক্রমী পেশা খাবার হোটেল ম্যাচিয়ারের কাজ বেছে নিতে হয়েছে তাকে।
তরুণী টুম্পা বোরখার উপরে শরীরে এপ্রোন জড়িয়ে কয়েন বাজারের মহসিন আলমের মালিকানাধীন মাসুম বিল্লাহ্ খাবার হোটেলে কর্মচারীর কাজ করছে। ক্রেতারা আসলে তাদেরকে রুটি, পরোটা, ভাত-তরকারি খেতে দিচ্ছে। তিনবেলা খাবার আর মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা কাজ করছে সে।
টুম্পা জানায়, ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সে একই ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ সহ স্কলারশিপ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে সে ধানাইদহ খলিশাডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথমবর্ষের ছাত্রী। কিন্তু জীবিকার প্রয়োজনে খাবারের হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে। আর এই কাজ করতে গিয়ে তার লেখাপড়া বন্ধের পথে।
টুম্পা আরও জানায়, সংসারে আয়ের একমাত্র অবলম্বন তার পিতা আব্দুর রহিম কয়েক বছর ধরে জটিল রোগে আক্রান্ত। এছাড়া তার দাদী জমেলা বেগম (৭২), মা তহমিনা খাতুন এবং চার মাস বয়সের একমাত্র ছোট ভাইটিও অসুস্থ। তার উপর কিস্তি পরিশোধের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো চেপে বসেছে সুদি মহাজনরা। তাই পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে পরিস্থিতি সামাল দিতে লেখাপড়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে সে এখন হোটেলে ম্যাচিয়ার পদে কাজ করছে। সচরাচর এ পেশায় মেয়েরা না এলেও বাঁচার তাগিদে একান্ত বাধ্য হয়েই সে এ কাজ করছে বলে জানায় টুম্পা। মেধাবী টুম্পার চোখজুড়ে যেখানে সরকারি বড় কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল আজ সে চোখে কষ্টের জলে পরিপূর্ণ। জলে ভরা ছলছল চোখে সে জানায়, ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে এতোদূর এসেছি। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শিখে বিসিএস ক্যাডার হবো। কিন্তু বাবা-মাসহ স্বজনদের আহার আর চিকিৎসার খরচ জুটাতে আয়ের পথ খুঁজতে হয়েছে। তাই বেমানান ও কষ্টকর হলেও খাবার হোটেলে কর্মচারীর কাজ করেই আপাতত পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করছি। তবে সুযোগ পেলে টুুম্পা লেখাপড়াটাকে আঁকড়ে ধরেই বড় হতে চায়। কিন্তু সে স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি না তা তার জানা নাই।
নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমিন ডালু জানান, টুম্পার পরিবারের খোঁজখবর তিনি নিয়েছেন। তার পরিবারকে সাধ্যমতো সরকারি চলমান সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। পাশাপাশি টুম্পা যেন নিয়মিত কলেজে যেতে পারে সে বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এ্যাড. নজরুল ইসলাম । ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক ভোরের খবর,খন্দকার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান। অফিসঃ ১৫০ নাহার ম্যানসন (৫ম তলা) মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকা,ঢাকা -১০০০। বার্তাকক্ষ-+৮৮০১৭৪৫-৩৫৪২৭৭