টঙ্গীবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি : সারা দেশের ন্যায় করোনা কর্মকাণ্ডে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা প্রশাসন ব্যস্ত সময় পার করছে। আর এই সুযোগে উপজেলার পদ্মা নদী থেকে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন কতিপয় ভূমিদস্যু। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার দিঘীরপাড় অঞ্চলের রজতরেখা নদীর মুখে পকেট তৈরি করে সেখানে বালুর ভরাট করছেন ইসমাইল বেপারী। মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা নদী থেকে খনন যন্ত্রের মাধ্যেমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলছে এই ভরাট কাজ। তার পাশে অপর একটি খনন যন্ত্র বসিয়ে মাটি কর্তন করছেন তার চাচাতো ভাই শাহাদাৎ বেপারী। এর আগে ওই স্থান হতে রাতের অন্ধকারে তারা মাটি কর্তন করলেও প্রশাসন করোনা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকায় এই সুযোগে প্রত্যক্ষ দিবালোকে মাটি কাটাছেন তারা। এর আগে কয়েকবার প্রসাশন অভিযান চালিয়ে ড্রেজারের পাইপ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে জরিমানা করলেও থেমে নেই তারা। যেই স্থান হতে মাটি কাটা হচ্ছে গত বর্ষায় ওই স্থানের পদ্মাপারের অনেক ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। শুকানো মওসুমে ব্যাপকভাবে ওই স্থান হতে মাটি কাটার ফলে ভাঙন আতঙ্কে ভুগছে নদী তীরবাসী। অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার শিলই ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম লিটন ব্যাপারির ছোট ভাই ইসমাইল ব্যাপারি ও চাচাতভাই শাহাদাৎ ব্যাপারি বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয়রা জানায়, শাহাদাৎ ও ইসমাঈল ব্যাপারি প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করছে। তাঁরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার মানুষও তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায়না। শাহাদাৎ ড্রেজারের পাইপের মাধ্যমে উত্তোলিত বালু সরাসরি বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। এর ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের রাকিরকান্দি ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় এলাকার নদী পাড়ের জনবসতি ও ফসলি জমি। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখাযায় ড্রেজারের মাধ্যমে নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। উত্তোলিত বালু পাইপের মাধ্যমে শিলই এলাকার কয়েকটি জমি ভরাট করা হচ্ছে। যে স্থানে রাকিরকান্দি গ্রামে বর্তমানে সাহাদাত বেপারী ভরাট কাজ করছেন তার পাশের জমিগুলোতে ড্রেজার এর বালুর সাথে উঠে আসা পানিতে সৃষ্টি হয়েছে জলবদ্ধতা। এই পনি গড়িয়ে ভেঙ্গে পরছে সরকারী রাস্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার কতিপয় যুবক ঘটনাস্থলে জানান, নদীতে যে ড্রেজার দুটি চলছে তা একটি ইসমাইল বেপারীর অপরটি শাহাদাত বেপারীর। ইসমাঈল বেপারি পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে,রজতরেখার মুখে জমিয়ে রাখেন। পরে ওই বালু বিক্রি করেন সারা বছর। এতে রজত রেখা নদীটি নাব্যতা হারিয়ে উৎপত্তিস্থলে ধূ ধূ শাহারায় পরিনত হয়েছে। এছাড়াও রজতরেখা নদীর উৎপত্তিস্থল দিঘীরপাড় বাজারের পাশে একাধিক পকেট তৈরি করে বালু পদ্মা নদী হতে অবৈধভাবে উত্তোলন করে উক্ত পকেটগুলো ভরাট করে পরে সেখান হতে বিক্রি করে ব্যাবসা করছে সে। সেখানে রাতের আধারে বালু ভরাট করেন দিনের আলোতে দেদারছে বিক্রি করেন। তাঁর ইশারায় জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন একটি চক্র। প্রতি ট্রলারের জন্য ইসমাঈল পায় ৫০০-১০০০ টাকা। শাহাদাৎ ও ইসমাঈলের ভূমি দস্যুতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এই নদীটি গত ৮-১০ বছর আগেও ছোট একটি খালের মত ছিল। এখন প্রায় ৪শ ফুটের বেশি চওড়া। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন দেখা দেয়। সব শেষ গত বছর দীঘির পাড় ও হাইয়ারপার এলাকার ২৫-৩০টি বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়। ঘটনাস্থলে রজতরেখার মুখে যেখানে বালু ভরাট চলছে বলুর পাইপের মাথায় ছাতা নিয়ে দাড়িয়ে ভরাট কাজ দেখছেন ইসমাইল বেপারী তিনি সাংবাদিকদের দেখে স্তম্ভ হয়ে যান। পদ্মা নদীতে যে খননযন্ত্র চলছে সেটা তার কিনা জিজ্ঞেস করলে সে সেটি তার বলে জানায়। মাটি কাটার কোন অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে সে অনুমতি নেই বলে এমনি ভরাট করছে বলে চলে যায়। এ ব্যাপরে টঙ্গীবাড়ী সহকারী কমিশনার ভূমি উছেন মে জানান, আমি এর আগেও কয়েকবার অভিযান চালিয়ে পাইপ ঘুরিয়ে দিয়েছি জরিমানা করেছি। খোজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।